ছবি: রয়টার্স।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তারই মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে আন্তর্দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বসল উত্তর কোরিয়া। পাঁচ বছর পরে কিম জং উন এই সময়টাকেই বেছে নিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে শক্তিপরীক্ষার জন্য। বৃহস্পতিবার তাঁর বহুদূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল, সংক্ষেপে আইসিবিএম) উত্তর কোরিয়া থেকে ১১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জাপানের জলসীমায় গিয়ে পড়ল।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মাঝারি আকারে পরপর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছিল উত্তর কোরিয়া। সরকারি ভাবে বলা হচ্ছিল, সেগুলো মূলত উপগ্রহ ছাড়ার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ঘটনার পরে আমেরিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি ছিল, কিম আসলে আইসিবিএম উৎক্ষেপণের মহড়াই দিচ্ছেন। এ দিন তা সত্য প্রমাণিত হল। আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান— তিন দেশই আজ কড়া সমালোচনা করেছে উত্তর কোরিয়ার। দক্ষিণ কোরিয়া জবাবি পদক্ষেপে স্থল-জল-আকাশ মিলিয়ে পাল্টা পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে কিম একাধিক বহুদূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছিলেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি, হোয়াসং-১৫— ৪৫০০ কিলোমিটার উচ্চতাসম্পন্ন ছিল এবং ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতাধর ছিল। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে এসে গিয়েছিল আমেরিকা। এ বার পিয়ংইয়ং যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল, সেটি হোয়াসং-১৭ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই এটি আগের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। কারণ জাপান দাবি করছে, এটি ৬০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে ছিল সে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জি-৭-এর বৈঠকে গিয়েছেন বেলজিয়ামে। তিনি বলেন, হোক্কাইডো দ্বীপের কাছে সমুদ্রে জাপানের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজ়েড) জলসীমায় ক্ষেপণাস্ত্রটি এসে পড়েছে। এই ঘটনাকে ‘অমার্জনীয় বেপরোয়ামি’ বলে বর্ণনা করেছেন কিশিদা।
২০১৭-য় কিম আইসিবিএম পরীক্ষা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিমের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ২০১৮-য় কিম ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করেন, তিনি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণুশক্তি পরীক্ষা থেকে বিরত থাকবেন। পরমাণু পরীক্ষাকেন্দ্র উড়িয়েও দেন তিনি। কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয়। তিনি যে ফের বড় ধরনের সক্রিয়তার কথা ভাবছেন, তার আঁচ গত কিছু দিন ধরে মিলছিল। পরমাণুকেন্দ্রও ফের চালু করা হয়েছিল। আজ সরাসরি তাঁর বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্রও পরীক্ষা করে ফেললেন কিম। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার আগে, স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে রাখতেই কি এই হুঙ্কার? পরমাণুশক্তিধর রাষ্ট্রের তকমা আদায়ের মরিয়া চেষ্টা? জল্পনা চলছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘‘কূটনীতির দরজা এখনও বন্ধ হয়নি। কিন্তু পিয়ংইয়ং অবিলম্বে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা থামাক।’’