গরম বা শীতের ছুটি পেলেই আমরা দৌড় লাগাই নিক্কো পার্ক বা ওয়াটার পার্কে। পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ছুটির দিন কাটানোর সেরা ঠিকানা হয়ে উঠছে এই থিম পার্কগুলি। কিন্তু কখনও এই থিম পার্কগুলি কেনার কথা ভেবেছেন কি?
উত্তর ক্যারোলিনার ম্যাগি ভ্যালিতে রয়েছে এমনই এক থিম পার্ক যা বিক্রি হবে শীঘ্রই। তবে রয়েছে এক টুইস্ট— এই পার্ক নাকি ‘ভূতুড়ে’! ১৯৬১ সালে তৈরি এই পার্কের আকর্ষণ আগে নানা মজাদার রাইড হলেও, এখন দর্শকদের কাছে রাইডের থেকেও বেশি আকর্ষণীয় এর ভূতুড়ে গল্পগুলি।
২৩০ একর জমির উপর অবস্থিত এই থিম পার্ক যার নাম ‘ঘোস্ট টাউন ইন দ্য স্কাই’ তা প্রায় ৬০ বছর পুরনো। রয়েছে চারটি ভাগ- ‘ইন্ডিয়ান ভিলেজ’, ‘মাউন্টেন ভিলেজ’, ‘মাইনিং টাউন’ এবং অবশ্যই ‘ঘোস্ট ভিলেজ’। নামেই ভূতুড়ে গ্রাম থেকে পুরো পার্কটিই ভূতুড়ে হয়ে গেল কী ভাবে?
ক্যারোলিনার মানুষদের মজাদার অভিজ্ঞতা দিতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে পার্কটি তৈরি করছিলেন আর বি কোবার্ন। প্রথমে বেশ ভালই চলছিল এই পার্ক। নিয়মিত নতুন নতুন রাইডও যোগ হয়। সমস্যার শুরুও সেখান থেকেই। নতুন রাইডগুলি চললেও একে একে পুরনো রাইডগুলি অজ্ঞাত কারণে ভেঙে পড়তে শুরু করে।
পার্কটি পার্বত্য অঞ্চলের মাথায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে পৌঁছনোর রাস্তা বলতে ছিল রোপওয়ে এবং দীর্ঘ পাহাড়ি রাস্তা। আর্থিক নানা বাধা সত্ত্বেও কোবার্ন পার্কটি চালু রেখেছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালে একদিন আচমকা বহু যাত্রী রোপওয়েতে আটকে পড়েন। যান্ত্রিক গোলযোগের আসল কারণ খুঁজে না পাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঝ আকাশে আটকে থাকেন যাত্রীরা।
এই ঘটনার পরই কোবার্ন পার্কটি বিক্রি করে দেন। এরপর একে একে মালিকানার হাত বদল চলতেই থাকে। কোনও মালিকই বেশি দিন এই পার্ক চালাতে সক্ষম হননি। কেউ পড়েছেন আর্থিক সমস্যায়, কেউ অভিযোগ করেছেন অদ্ভুত সব ঘটনার।
এক সময়ে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ দর্শক আসতেন এই পার্কে। আয়ও হত বেশ ভালই। তার পরও আর্থিক সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয়েছে মালিকদের। যান্ত্রিক গোলযোগের ঘটনাও কম নয়। একবার ‘স্কাইলিফ্ট’ নামক এক রাইডেও কয়েক ঘণ্টা দর্শকরা আটকে থাকেন।
২০১০ সালে বর্ষাকালে আচমকা পাহাড়ে ধস নামে এবং আশ্চর্যজনক ভাবে পার্কের অন্য কোথাও নয়, কেবল ঢোকার পথটিই বন্ধ হয়ে যায়। ম্যানেজারের অবহেলাকে দায়ী করে আরও একবার পার্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যে ঘটনা সবথেকে বেশি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল সেটি ঘটেছিল ২০১৩ সালে। একটি পারফরম্যান্স চলাকালীন এক ব্যক্তি যিনি ওই নাটকেরই অংশ ছিলেন, গুলির আঘাতে আহত হন। অথচ প্রতি দিনই এই নাটক দেখানো হত এবং রোজই বন্দুক ফাঁকা থাকত। তা হলে গুলি এল কোথা থেকে?
যিনি আহত হয়েছিলেন তিনি বলেন, “রোজই এই নাটক হত। আমি গুলি চালানোর পর প্রতিপক্ষও গুলি চালাবে, এটিই স্ক্রিপ্টের অংশ ছিল। সে দিন কোথা থেকে ওই গুলি এল এবং গুলিটি এসে কী ভাবে আমার পায়ে লাগল তা জানি না।” রোজকার মতো সে দিনও বন্দুক ফাঁকা ছিল বলেই দাবি করেছিলেন সবাই। তদন্তেও পাওয়া যায়নি কিছু।
এই ঘটনার পর থেকেই পার্কটির ভৌতিক বা অভিশপ্ত হওয়ার কথা আরও বেশি করে প্রচার পেতে থাকে। দর্শকদের আনাগোনা কমতে থাকে। পার্কটি বন্ধ হওয়ার পর অনেকে লুকিয়ে পার্কে ঢুকেছেন ভূতুড়ে কাণ্ড চাক্ষুষ করার জন্য। কোনও অলৌকিক বা ভূতুড়ে ঘটনার সাক্ষী থাকতে না হলেও দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় পার্কের চেহারা হয়ে গেছে ভূতুড়ে।
গত এপ্রিলে পার্কটি আবারও খোলার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ আবারও আর্থিক দোটানার শিকার হন বর্তমান মালিক ভ্যালেরি ও স্পেন্সার ওবের্লে। তাঁরা আগে ডিজনির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই পার্ক চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহের কারণ নেই।
তাঁরা বলেন, “পার্কটি বিক্রি করে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। এটি মোটেও অভিশপ্ত নয়। বন্ধ হওয়ার পর বহু রাইড ও যন্ত্রের পরিবর্তন করেছি আমরা। এখনও যদি আর্থিক সাহায্য পাই, তা হলে বিক্রি করব না এই পার্ক।”
পাহাড়ের চূড়োয় অবস্থিত এই বিশালাকার পার্কে রোপওয়ে এক ঘণ্টায় ১২০০ যাত্রীকে পৌঁছে দিতে পারে। রোপওয়ে সংস্কার ছাড়াও নতুন নতুন রাইড, দোকান এবং খাওয়ার জায়গা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পার্কটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বর্তমানে এই ২৩০ একরের পার্কটির দাম উঠেছে ৫.৯ মিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। বিক্রির জন্য দেওয়ালে পোস্টার থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— সব জায়গাতেই বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ওবের্লেরা। পার্কের নানা উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের কথা বলা হলেও কোথাও উল্লেখ নেই অদ্ভুত ঘটনাগুলির।
কী ভাবছেন? ঘুরে আসবেন নাকি এই ‘ভূতুড়ে’ পার্ক থেকে? রেস্ত থাকলে কিনেও নিতে পারেন কিন্তু।