প্রয়াত টনি মরিসন

সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে মারা গেলেন ৮৮ বছর বয়সি সেই মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখিকা টনি মরিসন। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৫:৪৯
Share:

ছবি: এপি।

সে বছর শরৎকালে একটাও গাঁদা ফুল ফোটেনি। কারণটা, তা যতই চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, আমরা সবাই জানতাম। তার বাবার বাচ্চা পেটে ধরেছিল পিকোলা, তা-ই তো একটা ফুলও ফোটেনি সে বছর।

Advertisement

আপাত সরল ভাষার আড়ালে চাবুকের মতো এই বাক্যগুচ্ছ দিয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাস শুরু হয়েছিল। সেটা ১৯৭০-এর কথা। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এসেছিল অবশ্য তার বেশ কয়েক বছর পরে— ১৯৯৩ সালে। তত দিনে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে তাঁর সব থেকে বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিলাভেড’। সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকা থেকে আমেরিকার স্কুলের পাঠ্যক্রম— সর্বত্র অনায়াস ছিল সে বইয়ের যাতায়াত। সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে মারা গেলেন ৮৮ বছর বয়সি সেই মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখিকা টনি মরিসন।

মরিসনের লেখক পরিচিতিতে এই ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ শব্দটা খুব জরুরি। তার কারণ শুধু এই নয় যে, তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ লেখক যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কারণটা লুকিয়ে আছে তাঁর উপন্যাসের পরতে পরতে।

Advertisement

১৯৩১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ওহায়োর এক আফ্রো-মার্কিন পরিবারে জন্মেছিলেন ক্লো আর্ডেলিয়া ওফর্ড। ক্লো-র বয়স যখন মাত্র দুই, তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বাড়িওয়ালা, ঠিক সময়ে বাড়ি ভাড়া না-দেওয়ার জন্য। মরিসন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘সেই ভয়াবহ ঘটনাতেও মা-বাবাকে বিচলিত হতে দেখিনি। ওঁরা বলতেন, নির্মম পরিস্থিতির মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে নিতে হয়। তাঁদের সেই কথাটাই আমার জীবনের চালিকাশক্তি।’’

বারো বছর বয়সে, ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করার সময়ে নিজের নাম পাল্টে ‘অ্যান্টনি’ করে নেন ক্লো। সেই ‘অ্যান্টনি’ই থেকেই ‘টনি’র জন্ম। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বিয়ে করেছিলেন জামাইকান স্থপতিবিদ হ্যারল্ড মরিসনকে। বছর কয়েক পরে বিয়ে ভেঙে যায়, থেকে যায় ‘মরিসন’ পদবিটি।

এই টনি মরিসন নামেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস— ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’। স্কুলে থাকার সময়ে তাঁর এক শ্বেতাঙ্গ সহপাঠিনী জিজ্ঞাসা করেছিল— ‘তোমার চোখ আমাদের মতো নীল নয়। তুমি নিশ্চয় চাও, তোমার চোখও এ রকম সুন্দর, নীল হোক।’ ‘‘কুড়ি বছর পরেও সেই নীল চোখের স্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত কালো চোখের কালো মেয়েটিকে’’, অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন টনি। বলেছিলেন, ‘‘নীল চোখ, সোনালি চুল, সাদা চামড়ার বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, নির্মম কিন্তু অপরূপ, শিকলে বাঁধা, কিন্তু ডানায় ভর দিয়ে উড়ানে উন্মুখ, সেটাই বারবার লিখেছি আমি। কারণ মৃত্যুই যেমন জীবনের চরম ব্যঞ্জনা, ভাষা তেমনই জীবনের!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement