—প্রতীকী চিত্র।
কোভিড রুখতে মিশ্র টিকায় গুরুতর ক্ষতি নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও কারণ নেই দুশ্চিন্তার। বরং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে মিশ্র টিকায়। নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মিশ্র টিকার ব্যবহার নিয়ে যখন কাটাছেঁড়া চলছে, সেই সময় এমনই উঠে এল রাশিয়ান ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)-এর রিপোর্টে। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার সঙ্গে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার উপাদান মিশিয়ে পরীক্ষা করে এমনই ফল পেয়েছে তারা। যদিও এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এখনও এই রিপোর্টে সিলমোহর দেয়নি।
কোনও এক ব্যক্তিকে দু’ধরনের টিকা দেওয়ার রেওয়াজ ‘ভ্যকসিন ককটেল’ নামে পরিচিত। এই ককটেলের উপাদান হিউম্যান অ্যাডেনোভাইরাস সেরোটাইপ ২৬ এবং ৫। এই দুই উপাদান মানবদেহে সংক্রমণের জন্য দায়ী। এই দু’টিকে কাজে বিশ্বের প্রথম নথিভুক্ত করোনা টিকা স্পুটনিক-ভি টিকা তৈরি হয়েছে। মিশ্র টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে স্পুটনিক-ভি টিকার প্রাথমিক উপাদান (স্পুটনিক লাইট) মেশানো হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সঙ্গে। তাতে কোনও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে দাবি গবেষকদের।
শুধু তাই নয়, একটি সংস্থার তৈরি দু’টি টিকা নিলে করোনার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, স্পুটনিক ভি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার মিশ্র টিকার কার্যকারিতা তার চেয়ে ৮০ গুণ বেশি বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। গবেষকদের দাবি, করোনার সমস্ত নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে স্পুটনিক লাইট এমনিতেই কার্যকর। এই ককটেলও সব ধরনের প্রজাতিকে রুখতে সক্ষম।
কোভিডের বিরুদ্ধে মিশ্র টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আরডিআইএফ-ই এর রিপোর্টই বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আজেরবাইজানে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এই পরীক্ষা শুরু হয়। তার অন্তর্বর্তী রিপোর্টেই মিশ্র টিকাকে নিরাপদ বলা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, যাঁরা মিশ্র টিকা নিয়েছেন, তাঁদের শরীরে কোনওরকম সমস্যা দেখা দেয়নি। বরং শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি পাওয়া গিয়েছে এবং এক ধরনের টিকার তুলনায় তা বেশি দীর্ঘস্থায়ীও।
আরডিআইএফ-এর অধিকর্তা কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেন, ‘‘যে ভাবে করোনার নতুন নতুন প্রজাতি উঠে আসছে, তাতে টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি মিশ্র টিকা নিয়ে যত বেশি উদ্যোগী হবে, অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই ততই সফল হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার এই প্রচেষ্টা সেই পথেই প্রথম পদক্ষেপ। আজেরবাইজান-সহ অন্য দেশেও মিশ্র টিকা সাফল্য পাবে বলে আশাবাদী আমরা। সে ক্ষেত্রে টিকাকরণ কর্মসূচি আরও ফলপ্রসূ হবে এবং মানুষকে মারণ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানো যাবে।’’
জার্মানি-সহ ইউরোপের একাধিক দেশে ইতিমধ্যেই মিশ্র টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ভারতে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস) মিশ্র টিকার সপক্ষে সওয়াল করলেও এখনও এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভারত বায়োটেকের তরফে কোভ্যাক্সিন এবং গবেষণার পর্যায়ে আটকে থাকা বিবিভি১৫৪-র মিশিয়ে পরীক্ষার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে। এখনও পর্যন্ত তাতে সিলমোহর পড়েনি।