মেহুল চোক্সী। —ফাইল চিত্র।
গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিন বছর আগে। এ বার অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকেও নিখোঁজ ১৪ হাজার কোটি টাকার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত শিল্পপতি মেহুল চোক্সী। স্থানীয় সময় রবিবার বিকেল সওয়া ৫টায় বিশেষ কারও সঙ্গে নৈশভোজ সারতে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পর রাত গড়িয়ে গেলেও ফেরেননি। খোঁজাখুঁজি শুরু হলে গভীর রাতে গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। চোক্সীর কোনও হদিশ মেলেনি।
চোক্সীর আইনজীবী বিজয় অগরওয়ালও নিজের মক্কেলের হদিশ দিতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, পরিবারের কেউ জানেন না, চোক্সী কোথায়। অ্যান্টিগা পুলিশ তাঁকে খুঁজে চলেছে। পরিবারের লোকজনও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তবে চোক্সীর হাল হকিকত জানা নেই বলে বিজয় হাত তুলে নিলেও, পলাতক শিল্পপতির ঘনিষ্ঠদেরই একাংশের ধারণা, ভারতে প্রত্যর্পণ ঘিরে টানাপড়েনের জেরে তিনি কিউবায় পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। কারণ সেখানেও সম্পত্তি রয়েছে তাঁর।
চোক্সী নিখোঁজ বলে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে অ্যান্টিগা পুলিশ। তাঁর কোনও খোঁজ পেলে খবর দিতে আর্জি জানানো হয়েছে সে দেশের নাগরিকদের। চোক্সীর ঘনিষ্ঠদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অ্যান্টিগা ছাড়াও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আরও একটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে চোক্সীর। তবে সেটা কিউবা-ই কি না, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। চোক্সীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পৌঁছেছে সিবিআইয়ের কাছে। তারা বিষয়টির দিকে নজর রাখছে।
১৪ হাজার কোটি টাকার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডে অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ী চোক্সী এবং তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদী। গোয়েন্দারা কিছু করে ওঠার আগেই ২০১৮ সালে দেশ ছেডে় পালান তাঁরা। তার পর অ্যান্টিগায় আশ্রয় নেন চোক্সী। নীরব আশ্রয় নেন ব্রিটেনে। অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব রয়েছে চোক্সীর। তবে তাঁকে দেশে ফেরাতে দিল্লির তরফে লাগাতার চাপ দেওয়া হচ্ছিল অ্যান্টিগাকে। তা নিয়ে গত বছর মুখ খোলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউনও। তিনি জানান, আইনি সুবিধা ব্যবহার করে এখনও সেখানেই রয়েছেন চোক্সী। কিন্তু সমস্ত আইনি সুবিধা শেষ হয়ে গেলেই তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এমনিতে কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল অ্যান্টিগা। তবে চোক্সীর মতো অপরাধীদের তাঁদের দেশে কোনও জায়গা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন গ্যাস্টন। যদিও নিজেকে অপরাধী বলে মানতে নারাজ ছিলেন চোক্সী। তাঁর যুক্তি ছিল, মিথ্যে অভিযোগে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। অন্য দিকে, নীরব এখনও ব্রিটেনেই। ব্রিটিশ সরকার যদিও তাঁর প্রত্যর্পণে সায় দিয়ে দিয়েছে। তবে এখনও বেশ কিছু আইনি সুবিধা রয়েছে নীরবের কাছে।