প্রতীকী ছবি।
গত দু’বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে যে বিপর্যয় ঘটে চলেছে, সে কাহিনির মুখ্য চরিত্রে রয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। এ বারে এই গল্পে হাজির নতুন ‘জুটি’— ‘ফ্লোরোনা’। এই প্রথম এর কথা শোনা গেল ইজ়রায়েলে। এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর শরীরে ধরা পড়ল একই সঙ্গে দু’টি ভাইরাসের সংক্রমণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও করোনাভাইরাস। সংক্ষেপে যাকে বলা হচ্ছে ফ্লোরোনা।
বিশ্বে প্রথম কোভিডের টিকাকরণ শুরু হয়েছিল ব্রিটেনে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। তার পরপরই টিকা দেওয়া শুরু করেছিল ইজ়রায়েল। সবচেয়ে দ্রুত গতিতে টিকাকরণ চলেছে এ দেশে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সীমান্ত বন্ধ করে রেখে দেশকে প্রায় করোনা-মুক্ত করে ফেলেছিল ইজ়রায়েল সরকার। কিন্তু শেষ হয়েও হয়নি শেষ। এখন ফের কোভিড সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার কমপক্ষে ৫০০০ নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শুক্রবার থেকে শারীরিক ভাবে দুর্বল ও প্রবীণদের কোভিড টিকার চতুর্থ ডোজ়ও দেওয়া শুরু করেছে ইজ়রায়েল। তৃতীয় ডোজ় নেওয়ার চার মাস হয়ে গেলেই চতুর্থ ডোজ় দেওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতেও রক্ষা নেই, নতুন বিপদ এসে হাজির।
এই সপ্তাহের গোড়ায় ইজ়রায়েলে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শরীরে ফ্লোরোনা ধরা পড়েছে। স্থানীয় দৈনিকে দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী টিকা নেননি। ইজ়রায়েলি চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেড়েছে এ দেশে। এর মধ্যে এই তরুণীর একটু অন্য রকম উপসর্গ দেখা যায়। পরীক্ষা করতে দেখা যায়, তাঁর শরীরে উপস্থিত দু’টি ভাইরাসই। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক নাহলা আব্দেল ওয়াহাব জানান, ফ্লোরোনা হওয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, কোনও ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কতটা দুর্বল হয়ে গেলে তাঁর একই সঙ্গে দু’টি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
গোটা বিশ্ব এখন ওমিক্রন আতঙ্কে ত্রস্ত হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সংক্রমণ ঢেউ নয়, সুনামি হয়ে উঠছে। ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশে দিনে ২ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত ধরা পড়ছেন। এ অবস্থায় ‘ফ্লোরোনা’র আগমন খুবই চিন্তার।
নতুন আর একটি শব্দও ছড়াচ্ছে ব্রিটেন-আমেরিকায়— ‘ডেলমিক্রন’। একই সঙ্গে কোনও অঞ্চলে ডেল্টা স্ট্রেন ও ওমিক্রন স্ট্রেনের সংক্রমণ বৃদ্ধিকে ডেলমিক্রন বলা হচ্ছে। (এক জনের দু’টো স্ট্রেনে সংক্রমণ হচ্ছে না) দু’টো স্ট্রেনেই সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। অর্থাৎ এত দিন যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ডেল্টাকে সরিয়ে ক্রমশ ওমিক্রন মূল সংক্রামক স্ট্রেন বা ডমিন্যান্ট হয়ে উঠবে, তা হচ্ছে না। দু’টিই এক সঙ্গে মারণ খেল্ দেখিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকান শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচিও গত কাল বলেছেন, ডেল্টা থাকতে থাকতেই ওমিক্রনের বিপজ্জনক হারে ছড়িয়ে পড়া চিন্তা বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় সংক্রমণের যে সুনামি দেখা যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ ডেলমিক্রন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস
আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২২ সালে শেষ হবে অতিমারি। গত দু’বছর ধরেই অবশ্য নববর্ষে এ কথা বলে আসছেন হু-প্রধান।