n শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বুধবার। ছবি রয়টার্স।
আমেরিকার ক্যাপিটল হিলের সামনে সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। জ্বলে উঠেছে সার সার আলো। ঐতিহ্যবাহী ওয়াশিংটন স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে দুই যুগল। পাশাপাশি, তবু নিরাপদ শারীরিক দূরত্বে। করোনা কালে শপথ গ্রহণের ঠিক আগে এই ছবিটি টুইট করে ঐক্যের বার্তা দিলেন আমেরিকার নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ছবিটি সস্ত্রীক জো বাইডেন এবং স্বামীর সঙ্গে কমলার।
তিনি আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় হিসেবেও এই পদে প্রথম। আগামী দিনে আমেরিকার দায়িত্বের অনেকাংশ তাঁর বলিষ্ঠ কাঁধে থাকবে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলার হোয়াইট হাউসে পৌঁছনোর পথটা মোটেই সহজ ছিল না। তার উপরে সময়টা বড় সুখের নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের থেকে জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ক্যাপিটলে যে নজিরবিহীন হিংসার সাক্ষী থাকল বিশ্ববাসী, তা যেন কোথায় শান্তিপ্রিয় মানুষের ভরসা-বিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দেয়। তার উপরে বছরটা অতিমারির। করোনায় শুধুমাত্র আমেরিকায় ৪ লক্ষ মৃত্যুর শূন্যতাকে কোনও মতেই উপেক্ষা করা যায় না। তবু জীবন তো থেমে থাকে না। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তাই কমলার টুইট বার্তা, ‘শারীরিক দূরত্ব থাকলেও, আমাদের আত্মিক যোগ রয়েছে। সকলকে একসঙ্গে লড়তে হবে।’
করোনা-ধ্বস্ত দেশবাসীকে সান্ত্বনা দিয়েছেন কমলা। আগের একটি টুইটে বলেছেন, ‘এখনও মানতে পারি না যে ওঁরা আর নেই। কারও দাদু, কারও দিদা, ওঁরা আমাদের জগৎ ছিলেন। কারও বাবা-মা, কারও সঙ্গী, ভাই-বোন বা বন্ধু। কোভিডে যাঁদের হারিয়েছি, আজ তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। আজ রাতে একসঙ্গে সেই কষ্ট ভাগ করে নেব। সেরে উঠব আমরা।’
নতুন দিনের স্বপ্ন এঁকে কমলা ফের বলেছেন, ‘দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাল থেকে জো বাইডেনের সঙ্গে আমি কাজ করব। বর্তমান সমস্যাগুলির মোকাবিলা করব। দেশকে ফের নতুন করে গড়ে তোলার শপথ পূরণ করব।’
টুইটারে মানুষকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি এ দিন ইনস্টাগ্রামে দিনভর স্মৃতিচারণায় বুঁদ হয়ে ছিলেন কমলা। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় শুনিয়েছেন নিজের জীবনের গল্প। মায়ের দেখানো পথেই যে বরাবর চলেছেন, সে কথা লিখেছেন তিনি। মা ও বোনের সঙ্গে নিজের তিনটে পুরনো পারিবারিক ছবিও পোস্ট করেছেন। জানিয়েছেন, ‘আমার বাবা জামাইকান, মা ভারতীয়। পৃথিবীর দুই প্রান্তের বাসিন্দা। অন্য অনেকের মতো ওঁরাও আমেরিকায় নিজেদের স্বপ্ন খুঁজতে এসেছিলেন। সেই স্বপ্নটা ছিল নিজেদের নিয়ে, আমি আর আমার বোন মায়াকে নিয়ে।’ মা শ্যমলা গোপালন হ্যারিসের আমেরিকায় আসার গল্প, বার্কলের ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম অশ্বেতাঙ্গ বিজ্ঞানী হিসেবে শ্যামলার লড়াই— একটু একটু করে তুলে ধরেছেন সেই সব স্মৃতি। লিখেছেন, ‘মা সব সময় বলতেন, শুধু বসে থেকে কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ কোরো না। বরং নিজে কিছু করো। আমি রোজ নিজের জীবনে সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করি।’
চলার পথে যে সব মানুষ, জায়গা আর মুহূর্তরা তাঁর জীবনে ছাপ ফেলে গিয়েছে, অনুরাগীদের কাছে সেই সব গল্প শোনানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা।