China

China-Russia Relation: কূটনৈতিক মতাদর্শ এবং লক্ষ্য আলাদা, রুশ -চিন ঐক্যের স্থায়িত্ব নিয়েই সংশয়ে দিল্লি

এই মৈত্রী খুবই ভঙ্গুর। চিনের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক কখনই মধুর ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

পঞ্চাশ পাতার যৌথ নথি প্রকাশ করে রাশিয়া ও চিন ঐক্যের যে ছবিটা তুলে ধরেছে, এই মুহূর্তে যা আন্তর্জাতিক রাজনীতি তোলপাড় করছে— তার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে নয়াদিল্লির। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, পরিস্থিতির দিকে ভারত নজর রাখছে ঠিকই, কিন্তু তা নিয়ে এখনই শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ ইতিহাস বলছে, চিন-রাশিয়ার সম্পর্কের ভিতর বরাবরই মৌলিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। উভয়ের কূটনৈতিক মতাদর্শ এবং লক্ষ্যও এতটাই আলাদা যে, তারা যৌথ ভাবে এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতের উপরে কোনও কৌশলগত চাপ তৈরি করতে পারবে না।

Advertisement

গত সপ্তাহে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন করমর্দন করে জানিয়েছেন, আমেরিকার একনায়ক-সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে তাঁরা একজোট। যৌথ বিবৃতির বক্তব্য, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও আঘাত এলে বা বাইরে থেকে কেউ নাক গলালে রাশিয়া এবং চিন পরস্পরের পাশে দাঁড়াবে।’

সাউথ ব্লকের বক্তব্য, এই মৈত্রী খুবই ভঙ্গুর। চিনের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক কখনই মধুর ছিল না। গোটা ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে উভয়ের মধ্যে আস্থার অভাব প্রকট ভাবে দেখা গিয়েছে। ১৯৫৮ সাল থেকে ৩১ বছর কোনও সোভিয়েত নেতাকেই চিন সফরে যেতে দেখা যায়নি। ১৯৮৯ সালে যান রাশিয়ায় মিখাইল গর্বাচেভ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা ওঠাপড়া চলে। অবশেষে ২০০১-এ পুতিন রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে, চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখতে চুক্তি হয়। তবে সেই থেকে আজ পর্যন্ত চিন-রাশিয়া জোট কখনওই কোনও আনুষ্ঠানিক কৌশলগত জোটের চেহারা পায়নি। দু’টি রাষ্ট্রের মতাদর্শও ভিন্ন থেকেছে।

Advertisement

২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময় রাষ্ট্রপুঞ্জের গণভোটে চিন অনুপস্থিত থাকে। গত সপ্তাহের যৌথ বিবৃতিতেও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের কোনও মান্যতা চিন দেয়নি। পাশাপাশি, ইউক্রেন নিয়ে চলতি সংঘাতেরও কোনও উল্লেখ নেই রুশ-চিন যৌথ বিবৃতিতে। নিরাপত্তার প্রশ্নে চিনের পাখির চোখ এশিয়া। রাশিয়ার ইউরোপ। অর্থনীতির ক্ষেত্রে রাশিয়ার গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এখন চিনের এক দশমাংশ মাত্র। কিন্তু চিনের ছোট-ভাই হয়ে থাকতে কোনও ভাবেই প্রস্তুত নয় মস্কো। রাশিয়া এটাও খতিয়ে দেখেছে, চিনকে বিক্রি করার চেয়ে জার্মানি এবং ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস রফতানি করা অনেক বেশি লাভজনক। তা ছাড়া মধ্য এশিয়ায় চিন-রাশিয়া সহযোগিতা নিয়ে যত কথাই হোক না কেন, রাশিয়া এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব কমতে দিতে আদৌ রাজি নয়।

ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়েও চিন এবং রাশিয়ার মতভেদ রয়েছে। চিনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তুলনায় রাশিয়ার সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অনেকটাই কম। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের যুদ্ধ বাধলে চিনের পক্ষে রাশিয়াকে সমর্থন করা কঠিন। অন্য দিকে ইউক্রেন চিনের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। চিনের সঙ্গে ইউক্রেনের বাণিজ্যও ক্রমবর্ধমান।

আরও একটি বিষয়কে ভারত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। রাশিয়া-চিন বিবৃতিতে চিনের সঙ্গে ভারতের চলতি সীমান্ত সঙ্কটের কোনও উল্লেখ নেই। বেজিংয়ের ইন্ধন সত্ত্বেও কাশ্মীর নিয়েও ভারতকে খোঁচা দিতে যায়নি মস্কো। এই বিষয়গুলিকে খতিয়ে দেখে নয়াদিল্লি মনে করছে, চিন-রাশিয়ার এই হইচই খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগের মতো সুমধুর নেই বটে, কিন্ত যা রয়েছে— তা উভয় রাষ্ট্রের পক্ষে লাভজনক। ফলে রাশিয়া, আমেরিকা এবং চিন এই তিনটি দেশের সঙ্গেই পৃথক পৃথক ভাবে ভালমন্দ মিশিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বহাল রাখাটাই কর্তব্য বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement