(বাঁ দিকে) আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং আইপ্যাক কর্তা প্রতীক জৈন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
দিল্লি দখলে রাখতে ফের পরামর্শদাতা সংস্থার শরণাপন্ন হল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)। আসন্ন ভোটের জন্য আইপ্যাকের সঙ্গে চুক্তি করল আপ। সূত্রের খবর, প্রতীক জৈনের সংস্থার সঙ্গে সইসাবুদ সেরে ফেলেছে কেজরীর দল।
নির্ঘণ্ট মেনে ভোট হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে দিল্লিতে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে বাংলায় তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার সঙ্গেই চুক্তি সেরে ফেলল আপ। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটেও আইপ্যাকের সাহায্য নিয়েছিল তারা। তাতে ফলও মিলেছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি আসনেই বিজেপির কাছে হারতে হয়েছিল আপকে। কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রভাব পড়েনি বিধানসভা ভোটে। হাসতে হাসতে দিল্লি বিধানসভা দখল করেছিল আপ। সেই সময়েও আইপ্যাকের ভূমিকা আলোচিত হয়েছিল। আবার ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও আপ সাতটি লোকসভা আসনেই পরাস্ত হয়েছে। তবে এ বারের সঙ্গে গত বারের বিধানসভা ভোটের গুণগত পার্থক্য রয়েছে বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। তার কারণ, নানা দুর্নীতির অভিযোগে কেজরীওয়াল, মণীশ সিসৌদিয়ার মতো আপের শীর্ষ সারির নেতাদের জেল খাটতে হয়েছে। তাই গত বার যে প্রেক্ষাপটে ভোট হয়েছিল, এ বার তা ভিন্ন।
দিল্লি বিধানসভার গত ভোটের সময়ে আইপ্যাকের মাথায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। কিন্তু এখন তিনি সে সব থেকে অনেকটাই দূরে। বিহারে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করেছেন। যদিও সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে কোনও আসনেই সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি প্রশান্তের দল। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বাংলায় তৃণমূলকে ভোট বৈতরণী পার করিয়ে দেওয়ার পরেই প্রশান্ত ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পরামর্শদাতার কাজ থেকে সরে যাবেন। প্রশান্ত সরে গেলও আপ রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গেই। গত লোকসভা ভোটে প্রতীকের নেতৃত্বেই তৃণমূলকে জেতানোর কাজ করেছিল আইপ্যাক। এ বার তাঁর কাঁধে কেজরীওয়ালকে ভোটে জেতানোর দায়িত্ব।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পরে পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। তবে তার আগে আইপ্যাক তাদের সাফল্য দেখিয়েছিল ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে। যে নির্বাচনে প্রথম বার দেশের ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই ভোটে আইপ্যাক ছিল বিজেপির পরামর্শদাতা সংস্থা। দিল্লি ছাড়াও বাংলার বাইরে এর আগে অন্ধ্রপ্রদেশের জগনমোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবেও কাজ করেছে এই সংস্থা।
তৃণমূলে আইপ্যাকের ভূমিকা নিয়ে দলের অনেকেরই ক্ষোভ রয়েছে। প্রবীণদের অনেকেই মনে করেন, আইপ্যাক পরামর্শদাতার বদলে দলের মধ্যে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার মানসিকতা নিয়ে চলে। যাকে অনেকে ‘দলের মধ্যে দল’ বলে অভিহিত করেন। ওই পরামর্শদাতা সংস্থা যখন প্রথম তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন জেলায় জেলায় বিক্ষোভ তুমুল আকার নিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, আইপ্যাকই নেতৃত্ব ঠিক করে দিতে চাইছে। যদিও ২০২১ পর্যন্ত সে সবে আমল দেননি তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্ব। দেখা গিয়েছিল, পরামর্শদাতা সংস্থার কথায় চলে ভোটে লাভ হয়েছে তৃণমূলের। আইপ্যাকের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলে উল্টো মতও রয়েছে। শাসকদলের একটি অংশ মনে করে, আইপ্যাকের সাহায্যে দলে একটি ‘সিস্টেম’ চালু করা গিয়েছে। যা ২০১৯ সালের ভোটের পরে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল।
তবে দিল্লিতে আইপ্যাকের সামনে আপের সংগঠনে ঝাঁকুনি দেওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই বলেই মত অনেকের। কারণ, দু’মাসের মধ্যেই সেখানে ভোট হবে। ফলে প্রচারের অভিমুখ ঠিক করা, সমাজমাধ্যমের প্রচারে আখ্যান তৈরি করার মতো কাজেই তাদের ব্যস্ত থাকতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে আইপ্যাক যেমন ধারাবাহিক ভাবে রয়েছে, আপের ক্ষেত্রে তা নয়। কেজরীওয়াল চুক্তি করেছেন ভোটের জন্য। যেমনটা করেছিলেন গত বারের ভোটেও। গত বিধানসভা ভোটে কেজরীকে কুর্সিতে ফিরিয়েছিলেন পিকে। প্রতীক জৈন কি পারবেন? সেটাই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।