বিক্রি হয়ে গেল মাইকেল জ্যাকসনের ‘নেভারল্যান্ড’। প্রয়াত পপ সম্রাটের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। নথি বলছে, অতীতের স্বপ্নরাজ্য এই দিকশূন্যপুর কিনে নিয়েছেন ধনকুবের রন বার্কলে। ২ কোটি ২০ লক্ষ ডলারের পরিবর্তে। বার্কলে ছিলেন জ্যাকসনের সহযোগী। বর্তমানে তিনি বিনিয়োগ সংস্থা ‘ইউকাইপা কম্পানিজ’-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা।
সান্তা বারবারা থেকে ৬৪ কিমি দূরে এই সম্পত্তি বহু দিন ধরেই বাজারে বিক্রয়যোগ্য। ২০১৫ সালে প্রথম নিলামে এর দাম উঠেছিল ১০ কোটি ডলার। তার পর প্রতি বছর এর দাম কমেছে। গত বছরেও দর ছিল ৩ কোটি ১০ লক্ষ ডলার। অবশেষে তার থেকেও কমে হাতবদল হল এই সম্পত্তির।
জ্যাকসনের বিলাসবহুল এই র্যাঞ্চের সহমালিক ছিল কলোনি ক্যাপিটাল। বিশাল ঋণভারে জর্জরিত হয়ে শিল্পী ২০০৮ সালে এই প্রাসাদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টটিকে। তার পর থেকেই এটি জয়েন্ট ভেঞ্চারে পরিণত হয়।
অদ্ভুত সব জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো নেভারল্যান্ডে ছিল ফেরিস হুইল এবং মেরি গো রাউন্ডে সাজানো আস্ত একটা বিনোদন পার্ক। পোষ্যদের মধ্যে ছিল ওরাংওটাং এবং হাতি!
২৭০০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই দিকশূন্যপুরে ছিল মোট ২২ রকমের বাড়ি। সেগুলির মধ্যে একটি ছিল ১২ হাজার বর্গফুটের প্রাসাদ। যার স্থাপত্যশৈলি ছিল নর্ম্যান্ডি ঘরানার।
একাধিক অতিথিশালা, সুইমিং পুল, বাস্কেটবল কোর্ট এবং টেনিসকোর্টে সাজানো এই চৌহদ্দিতে ছিল ৫০ আসনের সিনেমাহল।
এস্টেটের বিশেষত্ব ছিল তিনটে রেলবোর্ড। ৩ ফুট দৈর্ঘ্যের ন্যারোগেজ রেলবর্ডোর নাম ছিল ‘নেভারল্যান্ড ভ্যালি রেলরোড’। ২ কামরার রেলগাড়িটিকে টেনে নিয়ে যেত স্টিম লোকোমোটিভ ইঞ্জিন। নিজের মায়ের নামে জ্যাকসন ইঞ্জিনের নাম দিয়েছিলেন ‘ক্যাথরিন’।
১৯৯১ সালে এই এস্টেটেই ল্যারি ফর্টেন্সিকে বিয়ে করেন এলিজাবেথ টেলর। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু ইভেন্ট এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তবে এই রাজসিক এস্টেটেও পুলিশ হানা দিয়েছে। ২০০৩ সালে জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশুদের উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, ‘নেভারল্যান্ড’-ই ছিল তারকার কুকীর্তির ডেরা।
পরে সব অভিযোগ থেকে পপসম্রাট মুক্তি পেয়েছিলেন। তবে তিনি আর কোনও দিন ‘নেভারল্যান্ড’-এ ফিরে আসেননি। বলেছিলেন, তিনি আর কোনও দিন এখানে থাকবেন না।
২০০৯ সালে জ্যাকসনের রহস্যজনক মৃত্যুর পরে এই সম্পত্তির নাম হয় ‘সাইকামোর ভ্যালি র্যাঞ্চ’। তার পর বিনোদন পার্কের রাইডগুলি সরিয়ে ফেলা হয়।
১৯৮৮ সালে এই এস্টেট কেনেন জ্যাকসন। শোনা যায়, ১ কোটি ৯৫ লক্ষ ডলার দাম ছিল সে সময়। আবার অনেক সূত্র থেকে জানা যায়, ৩ কোটি ডলারে এই সম্পত্তি কিনেছিলেন তিনি। সেই সম্পত্তিই আবার হাতবদল হয়ে গেল।
২০০০ সালের মাঝখান থেকে বার্কলে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন জ্যাকসনের সঙ্গে। সে সময় বিলাসবহুল জীবনযাত্রা সামলাতে গিয়ে অর্থকষ্টে পড়েছেন জ্যাকসন।
২০০৯ সালের ২৫ জুন রহস্যজনক কারণে প্রয়াত হন জ্যাকসন। তাঁর ভক্তরা ভেবেছিলেন নেভারল্যান্ডেই তাঁকে সমাধিস্থ করবেন। তাঁদের ইচ্ছে ছিল এলভিস প্রিসলের বাড়ি ‘গ্রেসল্যান্ড’-এর মতোই ‘নেভারল্যান্ড’ হয়ে উঠবে অনুরাগীদের পীঠস্থান।
কিন্তু নানা বিতর্কে তাঁদের ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি। মাইকেল জ্যাকসনকে সমাধিস্থ করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার ফরেস্ট লন মেমোরিয়াল পার্কে। তবে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত ‘নেভারল্যান্ড’ সবসময়েই ছিল অনুরাগীদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্র। এ বার সেখানেও পড়ে গেল নতুন মালিকানার শিলমোহর।