গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে ‘হিংসাত্মক’ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে কাঠমান্ডু পুলিশ। কিন্তু নেপালের সেই প্রাক্তন মাওবাদী কমান্ডার দুর্গা প্রসাই এখনও অধরা। এই পরিস্থিতিতে নেপালের গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, ভারত সীমান্তের তরাই অঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি।
নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দুত্ব ফিরিয়ে আনার দাবিতে গড়ে ওঠা সাম্প্রতিক আন্দোলনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রীর প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) যোগ দিয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য গড়ে ওঠা ‘জয়েন্ট পিপল্স মুভমেন্ট কমিটি’র (জেপিএমসি) নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম হলেন দুর্গা। গত শুক্রবার কাঠমান্ডুতে অশান্তির সূচনা তিনিই করেছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ। সে দিন একটি গাড়ি চালিয়ে দুর্গা সজোর ধাক্কা মেরেছিলেন পুলিশি ব্যারিকেডে। আর তার পরেই রাজপথে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিন আন্দোলনকারী।
দুর্গার ঘনিষ্ঠ নেতা দেবী সাংরাউলা এবং বিষ্ণু জং বসেনতকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার আগে ধরা হয়, আরপিপি-র সহ-সভাপতি রবীন্দ্র মিশ্র এবং সাধারণ সম্পাদক ধাওয়াম সমশের রানা-সহ প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের শতাধিক সমর্থককে। পার্লামেন্টের সদস্য রবীন্দ্র এবং রানা মুক্তি পেলেও অনেকেই এখনও জেলে। কিন্তু খোঁজ নেই দুর্গার। সোমবার সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দুর্গা দাবি করেছিলেন, তিনি নেপালের একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু সেই ভিডিয়ো পরীক্ষা করে নেপাল পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্দিরটি সম্ভবত ভারতের তরাই অঞ্চলের কোনও এলাকার।
তবে ভারত সীমান্তবর্তী নেপালের কোনও গ্রামে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন বলেও পুলিশের একটি অংশ মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের তরফে সীমান্তবর্তী সমস্ত পুলিশ চৌকিগুলিতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক নেপালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের দাবিতে পুষ্পকমল দহাল ওরফে প্রচণ্ডের নেতৃত্ব ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী)’-র সশস্ত্র শাখা পিপল্স লিবারেশন আর্মি যে গেরিলা লড়াই চালিয়েছিল, দুর্গা ছিলেন তার অন্যতম যোদ্ধা। ২০০৬ সালে মাওবাদীরা অস্ত্র ছেড়ে গণতন্ত্রে শামিল হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, প্রায় দু’দশক আগে ভারতের উত্তরের পড়শি দেশ নেপালে প্রচলিত ছিল রাজতন্ত্র। শেষ রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।