নরেন্দ্র মোদীর ব্রিটেন সফর নিয়ে নেতিবাচক অবস্থানেই থেকে গেল বিলেতের মিডিয়া। সমালোচনা, কটাক্ষ আর তীক্ষ্ণ শ্লেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করল ব্রিটেনের প্রায় প্রতিটি প্রথম সারির দৈনিক। কোনও সংবাদপত্রের উদ্বেগ ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি নিয়ে। কোনও দৈনিক আবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে মোদীকে ‘হিন্দু উগ্রবাদী’ আর বিজেপিকে ‘হিন্দু তালিবান’ আখ্যা দিল। তবে আগের চেয়ে সমালোচনার সুর এ দিন কিছুটা নামিয়েছে ব্রিটিশ মিডিয়া।
দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, মোদীর ব্রিটেন সফর দিল্লি ও লন্ডনের সম্পর্ক দৃঢ় করবে। কিন্তু এমন একটা সময়ে এই সফর হচ্ছে, যখন ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে গোটা বিশ্ব উদ্বেগে।
ভারতের মাটিতে অসহিষ্ণুতা বরদাস্ত করা হবে না বলে মোদী আশ্বাস দেওয়ার পর যে বিলেতবাসী তাঁর প্রতি কিছুটা নরম হয়েছেন, তার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রতিফলন দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে। এই দৈনিক প্রথম পাতায় সবার উপরে ঠাঁই দিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের খবরকে। শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘অল ইজ ফরগিভেন, মিস্টার মোদী’। অর্থাৎ, শ্রী মোদী, আপনার সব অপরাধ আমরা মার্জনা করে দিলাম। ওই দৈনিকের ভিতরের পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অবশ্য কিছুটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘আজ সন্ধ্যায় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ভারতীয় সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের কাছে মূল আকর্ষণ মোদী, ক্যামেরন নন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (ক্যামেরন) শুধুমাত্র তারকা বক্তার পরিচয়টুকু করিয়ে দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই পরিষেবাটুকু দাম? প্রায় ৯০০ কোটি পাউন্ড।’’ অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বক্তৃতার মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়ে ব্রিটেনের জন্য ৯০০ কোটি পাউন্ডের চুক্তি উপহার পাচ্ছে ব্রিটেন। এই প্রতিবেদনে একটু শ্লেষ ক্যামেরনের প্রতি।
দ্য গার্ডিয়ানের ভাষা কিন্তু কিছুটা কড়া। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে এক রাশ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোথাও লেখা হয়েছে, ভারতীয় জনতা পার্টি হল ‘হিন্দু তালিবান’। কেউ লিখেছেন, ‘মোদী এক জন হিন্দু উগ্রবাদী, যিনি গণপ্রহারে অংশগ্রহণকারীদের নিন্দা করতে পারেন না। তবু আমাদের দেশের কাছে বাণিজ্যিক চুক্তি অনেক বড়।’ তবে দ্য গার্ডিয়ানের সব প্রতিবেদন নেতিবাচক নয়। ব্রিটিশ রাজনীতিক কিথ ভাজের লেখায় মোদীর এই ব্রিটেন সফরকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের মতো প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আমরা সবাই আগ্রহী।’
দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদীকে ‘রক স্টার রাজনীতিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।