ছবি : রয়টার্স।
ঝড়ের মুখে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আরব এবং মুসলিম প্রধান দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার শিখর সম্মেলনে যোগ দিতে রিয়াধ গিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সম্মেলনে তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে সব দেশ লড়ছে, নাম ধরে ধরে তাদের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাকিস্তানের নাম সে তালিকায় ছিল না। বার বার সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে যে সব দেশ, তাদের হয়ে ট্রাম্পকে সওয়াল করতে শোনা গিয়েছে। সে তালিকায় ভারতের নাম রয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সেখানেও ব্রাত্য। গোটা ঘটনাপ্রবাহকে পাকিস্তানের প্রতি ভয়ঙ্কর অপমান এবং অবজ্ঞা হিসেবে দেখছে পাক মিডিয়া। নওয়াজ শরিফদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই পাকিস্তানকে এত বড় অসম্মানের মুখে পড়তে হয়েছে— বলছে বিরোধী দলগুলি।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, রিয়াধের সম্মেলনে নওয়াজ কী বলবেন, প্রথা মতো আগে থেকেই তার খসড়া তৈরি করে রেখেছিলেন পাক আধিকারিকরা। ভাষণের খসড়া নিয়ে নওয়াজ নিজেও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় আ়ড়াই ঘণ্টা সম্মেলন স্থলে থেকেও তিনি ভাষণ দেওয়ার ডাক পাননি। এই ঘটনার খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম।
‘দ্য নেশন’ লিখেছে, ‘‘ছোট ছোট দেশগুলিও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে নিজেদের কথা বলেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে ভাষণ দিতে দেওয়া হয়নি।’’
‘ডেইলি পাকিস্তান’ লিখেছে, ‘‘যে সব রাষ্ট্রপ্রধানরা সন্ত্রাসবাদের অভিশাপের সম্মুখীন নন, তাঁদেরও ভাষণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শান্তি চেয়ে ট্রাম্প বেথলেহেমে
এতেই শেষ নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষণে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই বা সন্ত্রাসের মোকাবিলা প্রশ্নে পাকিস্তানের নাম এক বারও না আসায়, আরও বিস্মিত পাক মিডিয়া। যে যে দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার সহযোগী, ট্রাম্প নিজের ভাষণে তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের নাম সেখানে নেই। ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশগুলি ছাড়া আর যে সব দেশ সন্ত্রাসের শিকার, তাদের মধ্যে ট্রাম্প ভারত, রাশিয়া, চিন এবং অস্ট্রেলিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের নাম নেননি।
রিয়াধে ইসলামিক আমেরিকান সামিটে ডোনাল্ড ট্রাম্প, নওয়াজ শরিফ, জর্ডনের রাজা, মিশরের প্রেসিডেন্ট, সৌদি আরবের রাজা এবং আবু ধাবির যুবরাজ। ছবি: এএফপি।
পাক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান শুধু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে না, দীর্ঘ দিন ধরে সন্ত্রাসের শিকারও হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প পাকিস্তানের সে ‘লড়াই’ এবং ‘আত্মত্যাগ’কে স্বীকৃতি দেননি। বরং ভারতকে সন্ত্রাসের শিকার হতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প পাকিস্তানকে আরও অস্বস্তিতে ফেলেছেন বলে পাক কূটনীতিকরা মনে করছেন।
পাকিস্তানকে অবজ্ঞা করা শুধু নয়, আরব-ইসলামিক আমেরিকান সামিট থেকে যে ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো হয়েছে, তারও নিন্দা শোনা যাচ্ছে পাকিস্তানে। মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলির মঞ্চকে কাজে লাগিয়েই আমেরিকা যে ভাবে ইরানকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করল, পাকিস্তান কেন তার শরিক হল? প্রশ্ন পাক সংবাদমাধ্যমের। অবিলম্বে তেহরান গিয়ে ইরানকে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে আসুন পাক প্রধানমন্ত্রী— পরামর্শ কোনও কোনও পাক মিডিয়ার।
শুধু মিডিয়ার আক্রমণেই সীমাবদ্ধ নয় শরিফের অস্বস্তিত। পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান কানও নওয়াজ শরিফের তীব্র নিন্দায় মুখর হয়েছেন। নওয়াজ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার জেরেই রিয়াধে পাকিস্তানকে চরম অপমান সহ্য করতে হল— অভিযোগ ইমরানদের। ইমরান বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের মানুষ অত্যন্ত হতাশ।’’ ইমরানের প্রশ্ন— পাকিস্তানি জাতি কী চায়, তা তুলে ধরার কোনও তাগিদই যদি নওয়াজ শরিফের না থাকে, তা হলে তিনি রিয়াধের সম্মেলনে গেলেন কেন? ইমরান মনে করছেন, রিয়াধ সফরে পাক প্রধানমন্ত্রী যে আচরণ পেয়েছেন, তাতে গোটা পাকিস্তানের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।