গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নিলেই দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি ঘটবে। শনিবার এমনটাই দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম সাসপিলনেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, এ বার যিনি হোয়াইট হাউসকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন, তাঁর নীতি মেনে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হবে।’’
গত ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প। ৮ তারিখ টেসলা কর্তা ইলন মাস্কের মধ্যস্থতায় টেলিফোনে জ়েলেনস্কির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টার সেই কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এমন কোনও কথা তিনি (ট্রাম্প) বলেননি, যা আমাদের ঘোষিত অবস্থানের পরিপন্থী।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, আমেরিকায় এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে অন্যতম অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। নির্বাচনের আগে ফিলাডেলফিয়ায় প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে (মুখোমুখি বিতর্কে) ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেব।’’ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেও বিজয় ভাষণে হবু প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি নতুন করে কোনও যুদ্ধ শুরু করবেন না। বরং যুদ্ধ থামাতে সাহায্য করবেন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতীর উদ্দেশে বক্তৃতায় কিভের বিরুদ্ধে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের ‘নির্দিষ্ট ৭০টি লক্ষ্যে’ (মস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। পাশাপাশি, স্থল এবং জলপথেও শুরু হয়ে গিয়েছিল আগ্রাসন। ডনবাস-রাশিয়া সীমান্তের পাশাপাশি, বেলারুশে মোতায়েন রুশ ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া ব্রিগেডগুলি সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনের মাটিতে ঢুকে অভিযান শুরু করেছিল।
তার পর গত ৩৩ মাস ধরে ডেভিড বনাম গালিয়াথের লড়াই। দু’বছর আগে পরাক্রমশালী রুশ সেনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা দেখে চমকে গিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলির রিপোর্ট বলছে, জ়েলেনস্কির দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন পুতিনের দখলে। রুশ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) রয়েছে এর মধ্যে। যে অংশ নিয়ে পুতিন-জ়েলেনস্কি মতবিরোধ যুদ্ধের অন্যতম অনুঘটক। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তার সমাধানসূত্র খুঁজে পাবেন কি না, তার উপরেই যুদ্ধের ‘ভবিষ্যৎ’ অনেকাংশে নির্ভরশীল বলে মনে করা হচ্ছে।