পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
লন্ডনে চার বছর স্বেচ্ছানির্বাসনের পরে গত অক্টোবরে পাকিস্তানে ফিরেছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ। চর্চা শুরু হয়েছিল তার পরেই, নওয়াজ় কি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মসনদের লড়াইয়ে যোগ দেবেন। চর্চাকে সত্যি করে বুধবার তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ় জানিয়ে দিল, আসন্ন নির্বাচনে দলের সর্বসম্মতিক্রমে নওয়াজ়ই প্রার্থী।
২০১৭ সালে পানামা পেপার-সহ একাধিক দুর্নীতিতে শরিফকে তাঁর দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত। ২০১৮ সালে আদালতেরই নির্দেশে দু’দফায় দশ বছর ও সাত বছরের জেল হয় তাঁর। সেই সময় থেকেই লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন শরিফ। প্রাথমিক ভাবে হৃদ্রোগের চিকিৎসার জন্য ছ’সপ্তাহের জামিন নিয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। জামিনের মেয়াদ ফুরোনোর পরেও না ফেরায় আদালত তাঁকে ফেরারি আসামির তকমা দেয়।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত অক্টোবরে দেশে ফিরে আদালতে তাঁকে দেওয়া শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করেন শরিফ। গত ১২ ডিসেম্বর ইসলামাবাদ হাই কোর্ট তাঁকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে। শরিফ যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে লড়বেন, ইঙ্গিত জোরালো হয় তার পরেই। পিএমএল-এনের এক শীর্ষ নেতা রানা সানাউল্লা খানের কথায়, এই নির্বাচনে শরিফ ছাড়া আর কাউকে প্রার্থী হিসেবে ভাবতেই পারছেন না তাঁরা।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিন তিন বার প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন নওয়াজ় শরিফ। ১৯৯০ সালে দেশের ১২তম প্রধানমন্ত্রী হন তিনি, গুলাম ইশাক খান তখন প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৩ সালে গদিচ্যুত হয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন গুলাম ইশাক। তখন থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বেনজির ভুট্টো সরকারের বিরোধীপক্ষের প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন শরিফ। তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত হন তিনি। তার প্রায় এক দশক পরে ফের ২০১৩ সালে শরিফ প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রসঙ্গত, আস্থাভোটে ইমরান খানকে গদিচ্যুত করার পরে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ় শরিফের ভাই শাহবাজ় শরিফ। ২০২৩ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। তাঁর সময়েই পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পেশ করা হয় নির্বাচনী সংশোধনী বিল, ২০২৩। সেখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, পাক আইনসভার কোনও সদস্যের পদ যেন পাঁচ বছরের অতিরিক্ত খারিজ করা না হয়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিল পেশ করা থেকেই স্পষ্ট, নওয়াজ়কে প্রধানমন্ত্রীর পদের লড়াইয়ে ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করছে তাঁর দল।