নার্গিস মহম্মদি। —ফাইল ছবি।
জেলবন্দি হয়েও হিজাব পরতে চাননি তিনি। তাই ইরান সরকার গত বছর জানিয়ে দিয়েছিল, অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী নার্গিস মহম্মদিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় সোমবার নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নেত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হল।
বেশ কিছু দিন ধরে হৃদ্যন্ত্র এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন ইরানের সমাজকর্মী নার্গিস। গত বছর অসুস্থতার কথা জানিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতালে ভর্তির আবেদন জানিয়েছিলেন নার্গিস। কিন্তু শরিয়তি আইন অনুযায়ী, হিজাব পরতে চাননি। ফলে হাসপাতাল ভর্তির অনুমতি মেলেনি। জেল কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনশনও করেছিলেন তিনি।
নোবেলজয়ী নারী অধিকারকর্মীর অনুরাগীদের সংগঠন ‘দ্য ফ্রি নার্গিস কোয়ালিশন’ জানিয়েছে, গত অগস্টের শেষপর্বে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৫২ নার্গিস। কিন্তু ইরানের কেভিন জেল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার অনুমতি দেননি। ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ‘নারীদের উপর শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই’ করার জন্য ২০২৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরানের জেলবন্দি মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মহম্মদি। কিন্তু তাঁকে নরওয়েতে গিয়ে পুরস্কার গ্রহণের অনুমতি দেয়নি তেহরান প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে নোবেল বিজয়ীর যমজ সন্তান, আলি এবং কিয়ানাই মায়ের হয়ে পুরস্কার নিয়েছিলেন। সে সময় নার্গিসের চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থা করতে ইরান সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল নোবেল কমিটি। কিন্তু তাতে ফল হয়নি।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্য স্থানে মেয়েদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। আর ইসলামিক আইনের ঘেরাটোপে মেয়েদের অধিকার আদায়ের জন্যেই নার্গিসের লড়াই। তবে তার জন্য ভুগতে হয়েছে তাঁকে। ১৩ বার গ্রেফতার হয়েছেন। পাঁচ বার দোষী সাব্যস্ত। সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড আর ১৫৪টি বেত্রাঘাত প্রাপ্তি হয়েছে তাঁর। জেলে বন্দি অবস্থাতেই ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন নার্গিস।