ব্রাজিলে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশে বসে রয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা। ছবি: জি২০-র ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত।
জি২০ শীর্ষ বৈঠকে ভারতের ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ভাবনার কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন চলছে। বৈঠকে রাষ্ট্রনেতাদের আলোচনায় অনুন্নত দেশগুলির সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর মতে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারণে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর দেশগুলিকে। ‘গ্লোবাল সাউথ’ বলতে বোঝায় নিম্ন আয়ের দেশগুলিকে, যেখানে দারিদ্র প্রকট। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুসারে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জ়িল্যান্ড বাদে বাকি ওশিয়ানিয়া এবং এশিয়ার বেশ কিছু দেশ এই ‘গ্লোবাল সাউথ’ এর মধ্যে পড়ে।
ক্ষুধা এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই প্রসঙ্গে একটি আলোচনাচক্রে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর মতে, খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সঙ্কটের প্রধান কারণ হল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাতের পরিস্থিতি। এর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ‘গ্লোবাল সাউথ’। তাই এই দেশগুলির সমস্যার কথা বাদ দিয়ে কখনও আলোচনা সদর্থক হতে পারে না বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা এবং দারিদ্র দূরীকরণে ব্রাজিল আন্তর্জাতিক মঞ্চ স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছে। ব্রাজিলের এই উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান মোদী।
অতীতে নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের সময়েও জনমুখী সিদ্ধান্তের উপর জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ভারতের সেই ভাবনাও এ বছর ব্রাজিলে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্বে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সঙ্কটের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য জি২০ সদস্য রাষ্ট্রগুলির সরকারি স্তরে সংস্কারের বার্তাও দেন তিনি।
গত বছরে জি২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ছিল ভারত। সেখানে সম্মেলনের ভাবনা স্থির করা হয়েছিল ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। প্রধানমন্ত্রীর মতে, গত বছরের সেই ভাবনা এ বছরেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণে ভারত কী কী পদক্ষেপ করেছে, সে কথাও জি২০ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি। মোদী জানান, গত এক দশকে ভারতের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে উপরে তুলে আনা হয়েছে। ৮০ কোটি ভারতবাসীকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নারী ও কৃষকদের উন্নয়নের জন্য সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মোদীর কথায়, শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তা নয়, দেশবাসীর পুষ্টির দিকেও জোর দিচ্ছে ভারত।
জি২০ বৈঠকে মোদী বলেন, “পুরনোকে সঙ্গে নিয়ে নতুনের উদ্দেশে এগিয়ে চলেই ভারতের সাফল্য এসেছে। দেশে জৈব চাষ এবং অন্য প্রথাগত চাষের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। জোর দেওয়া হয়েছে পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই কৃষি ব্যবস্থার উপর। যাতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।”