প্রতীকী ছবি।
ইয়াকভস কি খিটখিটে ছিলেন? বলা মুশকিল! ছিলেন সাধারণ এক মানুষ। তিনি চলে গিয়েছেন আঠারোশো বছর আগে। তবু জীবন অগাধ পৃথিবীতে ধরে রেখেছে তাঁর শাপশাপান্ত।
গত বছর ইয়োনাথন অর্লাইন ইজ়রায়েলের গ্যালেলির বেত শিয়ারিমের প্রত্ন-গোরস্থানের একখানি গুহায় খুঁজে পেয়েছেন একটি ফলক। লাল রঙে দগদগে করে হিব্রুতে লেখা— ‘যে খুলবে তার সর্বনাশ হবে। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন প্রিস শিলালেখটির পাঠোদ্ধার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিচিত্র ভাষা দেখে মনে করার কোনও কারণ নেই, তিনি হিব্রুতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।’’
জোনাথন জানান, মৃত্যুর আগেই কবরলেখ তৈরি করা অপ্রচলিত নয়। তবে বিশেষত্ব রয়েছে ইয়াকভসেরটিতে। স্পষ্ট করে নিজের নাম আর বয়স ষাট বছর বলে লিখেছেন তিনি। উল্লেখ রয়েছে, ইহুদি হয়েছেন পুরোপুরি ধর্ম পাল্টে। বেত শিয়ারিমে ধর্মান্তরিত কোনও ইহুদির কবরের কথা গত ৬৫ বছরে এই প্রথম জানা গেল, বলছেন জোনাথন। এর আগে শুধুমাত্র অভিজাত ইহুদিদের কবরেরই খোঁজ মিলেছে সেখানে। ধর্মান্তরিতদের কোনও প্রশ্নই ছিল না।
তবে যেখানে ইয়াকভসের কবরের ফলকটি মিলেছে সেখানে, তার পাশেই ছিল আরও একটি ফলক। সব কিছু বিচার করে বোঝা গিয়েছে, চোরেরা শাপের পরোয়া না করেই তাঁর কবর খুলেছিল। যা নেওয়ার নিয়ে, ফলকটা একটা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে গিয়েছে। জোনাথন বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট, লেখাটা ইয়াকভসের। নিজের হাতে না লিখে থাকলেও লিখিয়েছেন। ঘরোয়া শিলালেখ যেমনটা হয়, তার সাপেক্ষে হস্তাক্ষর বেশ ভাল।’’ তাঁর মতে, ইয়াকভস সম্ভবত ধর্মান্তরণের পরের নাম। এই আবিষ্কারের কথা সামনে এসেছে চলতি মাসের গোড়ায়। ইজ়রায়েল অ্যান্টিগুইটিজ় অথরিটি (আইএএ) এবং ইউনিভার্সিটি অব হাইফা একটি আলোচনাসভার পরে যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে। ইয়াকভসের কবর-লেখ আপাতত আইএএ-র জিম্মায়। তারা যথাযোগ্য সংরক্ষণের পরে প্রদর্শনীতে রাখবে বলে জানিয়েছে।
বেত শিয়ারিমের আগের নাম ছিল শেখ আইব্রেইক। পরে জিউইশ ন্যাশনাল ফান্ড এলাকাটি কিনে নেয়। প্রত্ন-গোরস্থানটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এ পর্যন্ত চারটি ভাষায় প্রায় তিনশো শিলালেখ পাওয়া গিয়েছে সেখানে। বেত শিয়ারিম থেকে পাওয়া ইয়াকভসের কবর-লেখ পরবর্তী-রোমান সাম্রাজ্য এবং আদি-বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময়কালের পুনর্লিখনে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন জোনাথন। গত সপ্তাহে ইজ়রায়েল সরকার টুইট করেছে ফলকের ছবিটি। হালকা ছলে তুলনা টেনেছে প্যান্ডোরার বাক্সের সঙ্গে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই সেখানে গিয়ে কটাক্ষ করে লিখে আসছেন— আরও যে জিনিসটা না খোলার, সেটা হল ইহুদিদের জন্য দেশের সীমান্ত।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।