হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেন ফন্ডাকে (ইনসেটে)। ওয়াশিংটনে। ছবি: রয়টার্স
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়ি থেকে চার মাসের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে এসেছিলেন শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে। দু’-দু’টো অ্যাকাডেমি পুরস্কার জেতা অশীতিপর সেই হলিউড অভিনেত্রী জেন ফন্ডাকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল ওয়াশিংটন পুলিশ। তাঁর অপরাধ, মার্কিন কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল হিলের পূর্ব গেটের সামনে বেআইনি ভাবে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ১৫ জনকে।
অভিনেত্রীর ফেসবুক পেজে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, টকটকে লাল রঙের ওভারকোট পরা ফন্ডার হাত দু’টো পিছনে করে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ কাল একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, অবৈধ ভাবে জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়ার জন্য ১৬ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়ছে। তারা অবশ্য বিবৃতিতে ফন্ডার নাম নেয়নি।
ওয়াশিংটনে আসার আগেই ৮১ বছরের অভিনেত্রী অবশ্য একটি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, আগামী চার মাস তিনি এখানেই থাকবেন। প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। কাল যখন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, সামনে জড়ো হওয়া ভিড়টা প্রবল হর্ষধ্বনি দিয়েছে। জেনের কথায়, ‘‘ঝড়-জল-রোদ-তুষারপাত— আবহাওয়া যা-ই হোক না কেন, এখন থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার সকাল এগারোটায় আমরা বিক্ষোভ দেখাবই। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে প্রতিবাদের রাস্তা দেখিয়েছে, তা থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই। বরং
নেতাদের কাছে আমাদের আর্জি, গোটা বিশ্বকে বাঁচাতে দয়া করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুন।’’
এর আগেও জলবায়ু নিয়ে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে জেন ফন্ডাকে। ওয়াশিংটনের এই কর্মসূচির নাম তিনি দিয়েছেন ‘ফায়ার ড্রিল ফ্রাইডেজ’। নর্থ ডাকোটায় একটি পাইপলাইন প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছিলেন।
কাল যখন জলবায়ু নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে জেন গ্রেফতার হচ্ছেন তখনই ডেনভারে বিশাল একটি সমাবেশে বক্তৃতা দিল জলবায়ু নিয়ে আন্দোলনের মুখ, সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। এই সভায় সে দাবি করেছে, তাদের মতো কিশোর-কিশোরীরাই এখন পরিবর্তনের মুখ। গত মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জে গ্রেটার বক্তৃতা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল। বহু
মানুষ এখন তার সঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। ডেনভারে কাল দশ মিনিটেরও কম সময়ের জন্য বক্তৃতা দেয় গ্রেটা। কিন্তু তার কথা শুনতে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। গ্রেটা জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতারা তাদের কথা শুনবেন, এমনটা সে আশা করছে না। বরং বিশ্বের তাবড় নেতাদের উদ্দেশ করে বলেছে, ‘‘আপনারা কিছু করতে না-পারেন, করবেন না। যা করার আমরাই করব। গোটা বিশ্ব এখন জেগে উঠেছে। আর আমরাই পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন আসছে। আপনারা পছন্দ করুন বা না-করুন।’’
এর মধ্যে জলবায়ু নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আজ আমস্টারডামে ১৩০ জন আন্দোলনকারী গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আজ স্থানীয় সময় সকাল ন’টা নাগাদ মধ্য আমস্টারডামের মূল সেতুটি অবরুদ্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। যার
জেরে তুমুল যানজটের সৃষ্টি হয়। পর্যটকেরাও অসুবিধেয় পড়েন। বিক্ষোভকারীরা অবশ্য বলেছেন, ‘‘পুলিশ আমাদের শত্রু নয়। কিছু বড় শিল্পপতি আর কয়েকটি দেশ গোটা বিষয়টির ফায়দা তুলছে।’’