ছবি: রয়টার্স।
ইউক্রেনের ক্রেমেনচুক শহরে একটি শপিং মলে ভয়াবহ হামলার কথা আজ বেমালুম অস্বীকার করল রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রশাসন জানিয়েছে, সোমবারের ওই হামলায় ২০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত ৫৯। নিখোঁজের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। একটি সূত্র বলছে, অন্তত জনা কুড়ি নিখোঁজ। প্রেসিডেন্টের দফতর সূত্রের খবর, সংখ্যাটা তার দ্বিগুণ। ৪০ জন তো হবেই। স্থানীয় শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তা দিমিত্রো লুনিনের মতে, ৩৬ জনের খোঁজ মেলেনি। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। আজ রাশিয়া পাল্টা দাবি করেছে, শপিং মলে নয়, শহরে জমা হওয়া পশ্চিমি মদতপুষ্ট অস্ত্রভান্ডার ধ্বংস করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। সেই লক্ষ্যে তারা সফল হয়েছে।
ক্রেমেনচুক শহরের অ্যামস্টর শপিং মলে সোমবার বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় করেছিলেন স্থানীয়েরা। আচমকা হামলা চালায় রুশ যুদ্ধবিমান। ওই শপিং মলে বন্ধুর বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান ছিল বলে জানালেন কিভের বাসিন্দা কিরিল ঝেবোলোভস্কি। হামলার পর থেকে নিখোঁজ সেই বন্ধু। ফোন বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেসেজের কোনও উত্তর আসেনি। হামলায় পুড়ে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া খেলনা, অন্যান্য জিনিসের অবশিষ্টাংশ ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার করে সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা গোলা-গুলির ধাতব টুকরোর ছবি ছড়িয়েছে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমে। দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘শপিং মল থেকে ওদের কোনও বিপদের আশঙ্কা ছিল না। তা সত্ত্বেও হামলা চালানো হল।’’
ক্রেমলিন অবশ্য এই অভিযোগের ধারে-কাছে ঘেঁষেনি। প্রথম থেকেই তারা দাবি করে আসছে, সাধারণ মানুষ তাদের নিশানা নয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি অনুযায়ী, ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। মূলত, পশ্চিমি মদতে গড়ে ওঠা অস্ত্রভান্ডারগুলি ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। আজ সেই দাবিতে অবিচল থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকোভ বলেন, ‘‘আমরা নিখুঁত ভাবে লক্ষ্য ভেদ করেছি। পশ্চিমের পাঠানো অস্ত্রভান্ডার আমরা সফল ভাবে ধ্বংস করতে পেরেছি। আর শপিং মল? সে তো কবে থেকেই বন্ধ। শুনেছি আগুন লেগে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ প্রাণহানির বিষয়ে কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি কোনাশেনকোভ।
স্বাভাবিক ভাবেই রাশিয়ার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ইউক্রেন। ইউক্রেনের বিচার বিভাগ সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তারা হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে অভিযোগ জানাবে। যে সমস্ত যুদ্ধবিমান থেকে এই হামলা চলেছে, তার কয়েকটির বিমানচালককে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে ইউক্রেনের দাবি।
জার্মানিতে জি-৭ গোষ্ঠীর বৈঠক শুরু হওয়ায় পর থেকে ইউক্রেনে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর উপদেষ্টা ভাদিম ডেনিশেঙ্কো বলেন, ‘‘ক্রেমেনচুকের হামলাকে শুধুমাত্র পশ্চিমি দেশগুলির প্রতি রাশিয়ার হুঁশিয়ারি বলে ভাববেন না। যুদ্ধ থামানোর কোনও পরিকল্পনা যে ওদের নেই, তা এটা থেকেই স্পষ্ট।’’