—প্রতীকী চিত্র।
যুদ্ধ অব্যাহত। রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অন্যকে দোষারোপ করেই চলেছে। এ বারে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লোকালয়ে হামলার অভিযোগ তুলল রাশিয়া। পূর্ব ইউক্রেনের মাকিভকা শহর এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে। ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনের হামলায় এই শহরে ৪১ জন জখম। গুরুতর আহত এক ব্যক্তি পরে প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ার মূল লক্ষ্যই হল ডনেৎস্ক-সহ পূর্ব ইউক্রেন দখল। ইতিমধ্যেই ডনেৎস্কের একাংশ ক্রেমলিনের সমর্থনপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির দখলে চলে গিয়েছে। তবে এখন ইউক্রেনের শিল্পতালুকগুলির দিকেও নজর দিয়েছে মস্কো। মাকিভকায় রাশিয়ার নিযুক্ত প্রশাসনিক প্রধান ভ্লাদিস্লাভ ক্লিউচারোভ বলেন, ‘‘একটানা গোলাবর্ষণে ৪১ জন জখম হয়েছেন। এর মধ্যে দু’টি শিশু রয়েছে। এক জন গুরুতর জখম হয়েছিলেন। পরে তিনি মারা যান।’’ রাশিয়ার নিযুক্ত ডনেৎস্ক-প্রধান ডেনিস পুশিলিন দাবি করেছেন, মাকিভকার বসতি এলাকায়, হাসপাতাল চত্বরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী।
কিভের সেনাবাহিনীর দাবি, মাকিভকায় রুশ ‘পরিকাঠামো’ ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। একটি প্রকাণ্ড বিস্ফোরণের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাতের আকাশে বিস্ফোরণের আগুনের লেলিহান শিখা। একটি বাড়ি জ্বলছে। কিভের বাহিনীই ভিডিয়োটি প্রকাশ করেছে বলে শোনা গিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘সাময়িক ভাবে দখল হওয়া মাকিভকা শহরে রুশ সন্ত্রাসবাদীদের আরও একটি পরিকাঠামো ধ্বংসকরা হয়েছে।’’
এ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরমাণু হামলার আশঙ্কা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। কূটনীতিকদের একাংশের ভয়, পরবর্তী পরমাণু বিপর্যয় পূর্ব ইউক্রেনেই ঘটতে চলেছে। একটি আমেরিকান দৈনিকের প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করেছেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে রাশিয়াকে বিরত রাখার সব কৃতিত্ব চিনের। গত মার্চ মাসে জিনপিং যখন মস্কো গিয়েছিলেন, তখন সামনাসামনি পুতিনকে সাবধান করে এসেছিলেন।
বেলারুসে পরমাণু অস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে রাশিয়া। সে নিয়েও উদ্বিগ্ন পশ্চিমের দেশগুলি। বেলারুসের প্রেসিডেন্ড আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করবেন না। তবে পুতিনের অন্যতম ‘প্রিয় বন্ধুর’ কথায় ভরসা নেই অনেকেরই। টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রসঙ্গে রাশিয়া জানায়, আন্তর্জাতিক চুক্তি না-ভেঙেই পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার করবে তারা। এর পরে পুতিন জানান, এ বিষয়ে লুকাশেঙ্কোও তাঁর সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় চিনের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
আজই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র কাছে জ়াপোরিজ়িয়া পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জ়েলেনস্কির কথায়, ‘‘খুব বিপজ্জনক হয়েছে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে একযোগে নজর রাখা হচ্ছে।’’ কাল নৈশকালীন সাংবাদিক বৈঠকে জ়েলেনস্কি দাবি করেছেন, জ়াপোরিজ়িয়া পরমাণু কেন্দ্রে বিস্ফোরক জাতীয় কোনও জিনিস বসিয়েছে রাশিয়া।’’ প্রেসিডেন্টের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা আন্দ্রে ইয়েরমাকের কথায়, ‘‘রাশিয়ার পরমাণু হামলার হুমকির বিরোধিতা করেছে চিন। এই মুহূর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে চিনের অবস্থান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।’’