ছবি: সংগৃহীত।
মুখে স্মিত হাসি, সঙ্গে জম্পেশ হেডলাইন, ‘উই চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড: মডার্ন হিউম্যানিটেরিয়ান ইন দ্য ডিজিটাল এজ’। এক সুন্দরী যুবতীর এ ছবিই ভেসেছিল টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। ছবির যুবতী মিনা চ্যাং। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের বিদেশ দফতরের সিনিয়র আধিকারিক। টাইম ম্যাগাজিনের ভুয়ো প্রচ্ছদ বা নিজের বায়োডেটায় একাধিক তথ্য গরমিলের অভিযোগে আপাতত যিনি শিরোনামে। এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ট্রাম্প সরকার।
শুধুমাত্র টাইম ম্যাগাজিনের ভুয়ো প্রচ্ছদই নয়, নিজের কাজকর্ম সম্পর্কেও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলেছেন বলে অভিযোগ ৩৫ বছরের মিনার বিরুদ্ধে। ওই ধরনের নানা ভুয়ো ছবি নিয়েই ২০১৭-তে টেলিভিশনের একটি শোয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মিনা। সে সময় মিনা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ। ওই টিভি শোয়ে আলোচ্য ছিল, বোকো হারাম বা ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রভাব কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে। এ ধরনের এক গুরুগম্ভীর শোয়ে টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে ভেসে উঠেছিল টাইম ম্যাগাজিনের ওই প্রচ্ছদটি। বিশ্ব জুড়ে মিনার তথাকথিত কাজকর্ম নিয়েও আলোকপাত করতে বলেছিলেন শোয়ের সঞ্চালিকা। তাতে মিনা দাবি করেছিলেন, তাঁর সংস্থা ‘বিপর্যয় মোকাবিলায় ড্রোন প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে। এমন অনেকে দাবিই সে দিন করেছিলেন মিনা। তবে যেটা তিনি বলেননি, তা হল, ওই প্রচ্ছদটি আসলে ভুয়ো।
মিনার বিরুদ্ধে তাঁর বায়োডেটায় ভুল তথ্য দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এনবিসি নিউজ-এর এক তদন্ত রিপোর্টের অভিযোগ, নিজের কাজকর্মের খতিয়ান বা পেশাদার জীবন, এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও ভুয়ো দাবি করেছেন মিনা।
আরও পড়ুন: সেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভাগাভাগি নিয়েই জট পাকল শিবসেনা-এনসিপি জোট প্রক্রিয়ায়!
টাইম ম্যাগাজিনের নকল প্রচ্ছদ ছাড়া নিজের কাজকর্ম সম্পর্কেও ভুয়ো তথ্য দেওয়ার অভিযোগ ৩৫ বছরের মিনার বিরুদ্ধে। ছবি: সংগৃহীত।
গত এপ্রিলে আমেরিকার বিদেশ দফতরে কাজ শুরু করেন মিনা। এর পর এক সময় আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ব্যুরো অব এশিয়ার এক শীর্ষ পদের জন্য তাঁকে ভাবা হয়েছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরে কোনও কারণ না দেখিয়ে তাঁর মনোনয়ন ফিরিয়ে নেয় ট্রাম্প সরকার।
আরও পড়ুন: ‘এক দিন তো ফৌজ সরাতেই হবে, তার পর?’
নিজের বায়োডেটায় কী বলছেন মিনা? তাঁর দাবি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেছেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের চিফ মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস অফিসার ব্রায়ান কেনি জানিয়েছেন, হার্ভার্ড থেকে একটা কোর্স করেছেন বটে মিনা। তবে তা এমবিএ ডিগ্রি নয়, আট সপ্তাহের একটি ‘অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’। নিজের বায়োডেটা টুইটার-সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপলোড করেছিলেন মিনা। তবে মঙ্গলবার থেকে আচমকাই তা গায়েব হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বডিবিল্ডার, মডেল... এই চিনা চিকিত্সকের নগ্ন ছবি আলোড়ন তুলল সোশ্যাল মিডিয়ায়
নিজের অতীত গৌরব নিয়েও বড়সড় দাবি করেছেন মিনা। তাঁর দাবি, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের ন্যাশনাল কনভেনশনে বক্তৃতাও করেছেন তিনি। তবে সেটাই মনে হচ্ছে বিভ্রান্তিকর। ওই দুই কনভেনশন চলাকালীন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলেনে মিনা ভাষণ দিয়েছিলেন বটে, সেটাকে ন্যাশনাল কনভেনশনে বক্তৃতার সমান বলা যাবে না। নিজের বায়োডেটায় মিনা আরও দাবি করেছেন, তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অগণিত মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তবে তাঁর সংস্থার আয়কর রেকর্ড দেখলে সে নিয়েও সন্দেহ মাথাচাড়া দেয়। গুটিকয়েক কর্মী নিয়ে এবং তিন লক্ষ ডলারের বাজেটে কী ভাবে তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সে কাজ করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশ্ন আরও উঠছে! নিয়োগ করার সময় এই ধরনের শীর্ষ পদের জন্য সে সুরক্ষার কড়াকড়ি থাকে, সে ছাড়পত্র কি ছিল মিনার? এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস।
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বার মুখে পেপার স্প্রে, অভিযোগ হংকংয়ে
তবে মিনা যে একাই টাইম ম্যাগাজিনের ভুয়ো প্রচ্ছদ সাজিয়েছেন, এমনটা কিন্তু নয়। আমেরিকার ‘দ্য পোস্ট’ নামের এক সংবাদপত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের জুনে এমন কাজটা করেছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পও! সে ছবি আবার তাঁর পাঁচ-পাঁচটা গল্ফ ক্লাবের দেওয়ালেও শোভা বাড়াত।