চলছে আহতদের শুশ্রূষা।
দেশে সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় জড়ো হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। হঠাৎ সেই জমায়েতের মধ্যে দিয়ে তির বেগে ছুটে গেল সেনাভর্তি একটি গাড়ি। রাস্তার দু’পাশে ছিটকে পড়লেন বেশ কয়েকজন। রবিবার সকালে মায়ানমারের ইঙ্গানের এই ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে কমপক্ষে পাঁচ জনের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০। দেশের বৃহত্তম শহরে আচমকা ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার ইয়াঙ্গনে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল অভ্যুত্থান-বিরোধী ওই প্রতিবাদ। পুলিশ জানিয়েছে, ‘ফ্ল্যাশ মব’ ধাচের এই কর্মসূচি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে এসে ধাক্কা মারে ওই গাড়িটি। গাড়ির ভিতরে যারা ছিলেন তাঁরা সকলেই বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও গাড়িটি সেনাবাহিনীর নয়, সাধারণ গাড়ি। কিন্তু ধাক্কা মারাতেই শেষ নয়। বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনের পিছনে ধাওয়া করে তাঁদের উপর প্রহার চালাতে থাকেন ওই সেনারা। এমনকি কয়েক জনকে আটক করারও চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না-করার শর্তে ওই জমায়েতে থাকা এক বিক্ষোভকারীর বক্তব্য, ‘‘গাড়ির ধাক্কা খেয়ে একটি ট্রাকের ঠিক সামনে গিয়ে পড়েছিলাম। সামলে ওঠার আগেই একজন সেনা এসে আমাকে রাইফেল দিয়ে বেধড়ক মারতে শুরু করে। তবে আমি উল্টে তার উপর চড়াও হওয়ায় প্রথমে খানিকটা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয় সে। তবে দমে না-গিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে তখন সে গুলি ছুড়তে শুরু করেছিল। আমি কোনও মতে আঁকাবাঁকা ভাবে দৌঁড়ে পালিয়ে আসি। তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ঘটনার সময়ের একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো। কোনওটাতে দেখা যাচ্ছে, কী ভাবে হঠাৎ জমায়েতের পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে গাড়িটি। কোনওটিতে আবার উঠে এসেছে রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক বিক্ষোভকারীর নিথর শরীরের ছবি।
বর্তমানে দেশের শাসনভার যাদের দখলে সেই জুন্টা প্রশাসন অবশ্য এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে। তবে সেনার তরফে দাবি, বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। তাদের সামাল দিতে গিয়েই এই পরিস্থিতি।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি নোবেলজয়ী আউং সান সু চি-র দলকে সরিয়ে জুন্টা দেশের দখল নেওয়ার পর থেকেই সেনা-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার। এখনও পর্যন্ত এ ধরনের বিক্ষোভে শামিল হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৩০০ জন। সেনা আধিকারিকদের ছোড়া গুলিতেই প্রাণ গিয়েছে তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগের। তবুও শাসকের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বার বার রাস্তায় নেমেছেন মায়ানমারবাসীরা। ঠিক যেমন রবিবার সকালের এই ঘটনার পর বিকেলেও ফের ইয়াঙ্গনের রাস্তায় জড়ো হতে দেখা গেল প্রতিবাদীদের।