ইরমা ও হার্ভে। ছবি- নিউইয়র্ক টাইমস।
এই দু’জনের কেউই অবশ্য ফ্লোরিডার সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া হারিকেন নন।
হাতে হাত ধরে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন গত সাড়ে সাত দশক ধরে। হারিকেন না হলেও দাম্পত্য উত্তাল হয়েছে তাঁদের বহু বার। ঝড়ে। কিন্তু কখনওই সেই ঝড় সৈকত তছনছ করা হারিকেন হয়ে ওঠেনি! ফলে, তা টিঁকে রয়েছে টানা ৭৫ বছর ধরে।
হার্ভে আর ইরমার বিয়ে হয়েছিল আজ থেকে ৭৫ বছর আগে। পদবি তাঁদের শ্লুটার।
১০৪টি বছর হার্ভে পার করেছেন এই জুলাইয়ে। আর ইরমা ৯৩-এ পা দেবেন সামনের নভেম্বরে। দুই হারিকেন ‘হার্ভে’ আর ‘ইরমা’য় যখন অস্তিত্ব বিপন্ন মানুষের, ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ, তখন স্মৃতির সরণী বেয়ে একের পর এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থেকেছেন তাঁরা গত সাড়ে সাতটি দশক ধরে।
বিশ শতকের বহু ঘটনার সাক্ষী এই হার্ভে আর ইরমা। প্রথম এরোপ্লেন। চাঁদে নীল আর্মস্ট্রংয়ের হাঁটা। হ্যাঁ, তাঁদের সেই ঠাণ্ডা, মেঘে ঢাকা দিনটার খুঁটিনাটিও মনে আছে। যে দিন ওয়াশিংটনের স্পোকেনে তাঁদের বাড়ির কাছেই খুন হয়েছিলেন তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি।
কিন্তু তাঁদের নামেই যে দু’-দু’টো হারিকেন তছনছ করে দেবে আমেরিকার একটি বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের জীবন, সাড়ে সাত দশকের যাপনে তাঁরা কোনও দিনই তা ভাবতে পারেননি। শোনেনওনি। হার্ভে আর ইরমা টেলিফোনে মার্কিন সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে বলেছেন, ‘‘আমাদের নামের কেউ বা কিছু এমন ঘটাতে পারে ভেবে একটুও ভাল লাগছে না যে!’’
তার কারণও রয়েছে। এই সে দিন ১৯৭৯ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন মানুষের নামে ঝড়, টাইফুন, হারিকেনের নাম দেওয়া শুরু করে। সেই সব নামের মোট ৬টি মাস্টার লিস্ট রয়েছে। যার রোটেশন হয়। ২০১৭ সালের নামের তালিকার ফের ব্যবহার হবে ২০২৩-এ।
হার্ভের নামটি প্রথম দেওয়া হয়েছিল একটি ঝড়কে। ১৯৮১-তে। আরও ৬টা ঝড়ের নামও ওই হার্ভেই। হার্ভের পর যে ঝড়টি হয় ৬ বছর অন্তর, তার নাম দেওয়া হয়েছিল আইরিন। কিন্তু ২০১১ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব প্রান্তের বেশ কয়েকটা শহর সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর আইরিন নামটাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। আর কোনও ঝড়ের নাম আর তার পর আইরিন রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন- ভয়াল গতিতে ধেয়ে আসছে ইরমা, কাঁপছে ফ্লোরিডা
আরও পড়ুন- ৪০ বছর ধরে মহাকাশে হাঁটছে এই দুই পথিক
এ বছর দু’টি হারিকেন হার্ভে আর ইরমার জন্য যে বিপুল পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হল, তাতে এটুকু নিশ্চিত আগামী দিনে আর কোনও ঝড়ের নাম অন্তত হার্ভে বা ইরমা রাখা হবে না।
যাঁদের বিয়ে পা দিয়েছে ৭৫ বছরে, সেই ইরমার সঙ্গে হার্ভের দেখা হয়েছিল গত শতাব্দীর চারের দশকের গোড়ায়। ইরমা তখন পড়েন স্কুলে। বিয়েটা হয় ’৪২ সালে। ইরমার কথায়, ‘‘আমি মোটেই বিয়ে করতে চাইনি তখন। চেয়েছিলাম, স্কুলটা শেষ করতে। কিন্তু তখন ও (হার্ভে) এত চাপাচাপি করল যে বিয়েটা করতেই হল।’’
হার্ভে আর ইরমা তাঁদের জীবনে যে ঝড়গুলি দেখেছেন, তাঁদের নামগুলি কী কী?
দু’জনে একটুও না ভেবে গড়গড় করে বলে গিয়েছেন, পাঁচের দশকের হাজেল, ছয়ের দশকের কার্লা, হিল্ডা, আইনেজ, সাতের দশকের অ্যাগনেস, ডেভিড, আটের দশকের অ্যালেন, গিলবার্ট, হুগো, নয়ের দশকের অ্যান্ড্রু, মিচ আর এই শতাব্দীর প্রথম দশকের ঝড় ইসাবেল, ইভান, ক্যাটরিনা, ফেলিক্স তাঁরা দেখেছেন।
তাঁদের জন্মের পর রেডিও আবিষ্কার হয়েছিল। টেলিভিশন তখন ছিল দূর অস্তই!
আর আজ জীবনের ন’টা দশক পেরিয়ে তাঁরা প্রতি মুহূর্তে টেলিভিশনে দেখছেন, তাঁদের নামের দু’-দু’টি হারিকেন হার্ভে আর ইরমা কী ভাবে তছনছ করে দিচ্ছে বসতি, কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক জীবন।
হার্ভে আর ইরমার এই তাণ্ডবে একেবারে মুষড়ে পড়েছেন হার্ভে আর ইরমা!