তিনি এতটাই লম্বা যে সাধারণ উচ্চতার দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারেন না। গাড়িতে চেপে লং ড্রাইের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। বিছানায় আরামে শুয়ে ঘুমতেও পারেন না। তিনি সুলতান কোসেন।
সুলতানের জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের মার্দিন শহরে ১৯৮২ সালে। তিনি বিশ্বের সপ্তম দীর্ঘতম মানুষ। তাঁর উচ্চতা ৮ ফুট ১ ইঞ্চি।
তাঁর হাত এবং পায়ের তালু এতটাই বড় যে অর্ডার দিয়ে বিশেষ জুতো পরতে হয়। আঙুলে ধরার জন্য বিশেষ কলমের প্রয়োজন হয়। তাঁর জামার মধ্যে সাধারণ উচ্চতা এবং ওজনের দু‘জন মানুষ ঢুকে পড়তে পারেন।
সুলতান কী ভাবে এতটা লম্বা হলেন? জন্মের সময় অন্য বাচ্চাদের মতোই ওজন এবং উচ্চতা ছিল তাঁর। কিন্তু ১০ বছর বয়স থেকে তাঁর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করতে শুরু করেন তাঁর মা বাবা।
সুলতান তাঁর বন্ধুদের থেকে বা তাঁর বয়সি অন্যান্য ছেলেদের থেকে একটু বেশি গতিতেই লম্বা হতে শুরু করেছিলেন।
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে মা-বাবা জানতে পারেন যে সুলতানের মাথায় একটি টিউমার রয়েছে। টিউমার হয়েছে মাস্টার গ্ল্যান্ড পিটুইটারিতেই।
আমাদের দেহের সমস্ত হরমোন গ্রন্থিকেই নিয়ন্ত্রণ করে এই পিটুইটারি। টিউমার হওয়ার ফলে পিটুইটারির নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হেরফের হতে শুরু করে।
দেহে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ এতটাই বেড়ে যেতে শুরু করে যে যেন লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে তাঁর উচ্চতাও।
প্রথম দিকে তাঁকে দেখে হাসাহাসি করত বন্ধুরা, কেউ বা তাঁকে দেখে ভয় পেত। কারও সঙ্গেই খোলা মনে মেলামেশা করতে পারতেন না তিনি। স্কুলের সমস্ত বন্ধুও ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়।
একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন সলমন। তিনি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারতেন না। হাতে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাঁকে।
কোনও সংস্থা তাঁকে চাকরিও দিতে চাইছিল না। পরিবারের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে কোথাও যেতেও পারতেন না। পরিবারের সদস্যেরা ঘুরতে গেলে তাঁকে বাড়িতেই রেখে দিয়ে যেতেন।
এক বার পা ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু উচ্চতার জন্য কোনও হাসপাতালই তাঁর চিকিৎসা করতে রাজি ছিল না। ১০ দিন বাড়িতেই পড়েছিলেন। শেষে তাঁকে বিমানে আমেরিকায় নিয়ে আসতে হয়েছিল।
এ ভাবেই জীবন কাটছিল সুলতানের। ২০১০ সালে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল স্কুলে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। টানা দু’বছর চিকিৎসার পর তাঁর গ্রোথ হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু তত দিনে তাঁর উচ্চতা হয়ে গিয়েছে ৮ ফুট ১ ইঞ্চি।
২০১৩ সালে সুলতান তাঁর থেকে ১০ বছরের ছোট মার্ভে দিবোকে বিয়ে করেন এবং এর এক বছর পর উচ্চতার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেন তিনি।
এর পর একটি সার্কাসে যোগ দেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়ে প্রচুর শো করেছেন সুলতান। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট উচ্চতার মানুষ চন্দ্র বাহাদুরের সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছে তাঁর।
ছোটবেলায় চেহারা তাঁর কাছে অভিশাপ ছিল। এখন এই চেহারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করেন তিনি।