মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ক’জনই বা দেখতে পারেন?
সঞ্জল কিন্তু শুধু স্বপ্নই দেখেননি। সেই স্বপ্নে বাস্তবের রংও লাগিয়েছেন।
দলবল নিয়ে মহাকাশ ঘুরতে যাচ্ছেন অ্যামাজন কর্তা জেফ বেজোস। তারই ‘আয়োজক’ মুম্বইয়ের ওই মেয়ে।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফের জন্য নিজের হাতে মহাকাশযান বানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তিনি সঞ্জল গবান্ডে। ৩০ বছরের এই ইঞ্জিনিয়ারের জন্ম মহারাষ্ট্রের কল্যাণের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।
তাঁর বাবা মু্ম্বই কল্যাণ-দম্ভিবলি পুরসভায় কাজ করতেন। মা এমটিএনএল-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী।
মুম্বইয়ের স্কুলেই পড়াশোনা সঞ্জলের। তার পর মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন।
উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী সঞ্জল স্নাতক হয়ে থেমে থাকতে চাননি। ২০১১ সালে স্নাতকোত্তরের জন্য তিনি আমেরিকায় উড়ে যান।
আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সঞ্জল স্বপ্ন দেখেছিলেন মহাকাশযান বানানোর। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি অর্জন করেই তাই তিনি নাসায় কাজের জন্য আবেদন করেন।
কিন্তু নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কিছু সমস্যার জন্য নাসায় চাকরি করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি সঞ্জল।
মেরিন এবং রেসিং কার সংস্থার জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তিনি টয়োটায় কাজ করতেন।
টয়েটোয় থাকাকালীন তিনি পাইলটের প্রশিক্ষণও নিতে শুরু করেছিলেন। সপ্তাহে ছুটির দিনে প্রশিক্ষণ নিতেন। ২০১৬ সালে পাইলটের লাইসেন্সও পেয়ে যান।
সব কিছুর মধ্যেও মহাকাশযানের স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি সঞ্জল। সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপও পেল। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশযান দলের সদস্য হলেন তিনি।
২০২১-এর ২০ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় পশ্চিম টেক্সাসের মরুভূমির ‘লঞ্চ সাইট ১’ থেকে চার জন যাত্রী-সহ উৎক্ষেপিত হবে ‘নিউ শেপার্ড’। তাঁদেরই এক জন হবেন জেফ নিজে।
অ্যাপলো ১১-র চাঁদে অবতরণের ৫২তম বছরকে সম্মান জানাতেই এই দিনটি বেছে নিয়েছেন জেফ। এখনও অবধি কোনও যাত্রী ছাড়া অন্তত ১৫টি উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই যানের।
জেফের সহযাত্রী হবেন ৮২ বছর বয়সি মহিলা বিমানচালক ওয়ালি ফাঙ্ক। সব ঠিক থাকলে তিনিই হবেন প্রবীণতম মহাকাশচারী। আবার অলিভার ডিমেন নামে এক ডাচ কিশোর হবেন সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশযাত্রী। ১৮ বছরের অলিভার নেদারল্যান্ডসের এক ধনকুবেরের ছেলে। সঙ্গ দেবেন জেফের ভাই মার্কও।
জেফের সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’ এই রকেট বানিয়েছে। রকেটটি বানানোর জন্য বাছাই করা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করেছেন জেফ।
ওই দলেরই একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন সঞ্জল। রকেটের ইঞ্জিন বানানোর দায়িত্ব ছিল তাঁরই উপর।
‘নিউ শেপার্ড’ ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যবর্তী কারম্যান লাইনে কিছু ক্ষণ অবস্থান করবে।
মহাকাশে মানুষের থাকার জন্য ‘স্পেস কলোনি’ বানানোর উদ্দেশ্যেই ২০০০ সালে ‘ব্লু অরিজিন’ সংস্থার সূচনা করেন জেফ। মহাকাশ পর্যটন-সহ বহু পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। আপাতত প্রচুর ওজন সমেত মহাকাশে যেতে পারে, ‘নিউ গ্লেন’ নামে এমন এক রকেট বানানো হচ্ছে সংস্থাটিতে।
পৃথিবীর কক্ষ পথ ছাড়িয়ে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোর জেফের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার অপেক্ষা মাত্র। রকেট বানিয়ে কিন্তু ইতিমধ্যেই মহাকাশ ‘ছুঁয়ে’ ফেলেছেন সঞ্জল।