বিশ্ব উষ্ণায়ণে পৃথিবীর দুই মেরুর বরফ গলছে। গলছে অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে ভেসে বেড়ানো বিশালাকার বরফের স্তূপও। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন কানাডার এক মৎস্যজীবী। নৌকা নিয়ে ‘সাদা সোনা’র খোঁজে মহাসাগর দাপাচ্ছেন তিনি।
কানাডার ওই মৎস্যজীবীর নাম এডওয়ার্ড কিন। এত দিন মাছ ধরাই ছিল তাঁর পেশা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে নিজের পেশা বদলে ফেলেছেন তিনি। এখন তিনি ‘হোয়াইট গোল্ড হান্টার’ অর্থাৎ ‘সাদা সোনা শিকারি’। অতলান্তিকের বুক থেকে কী ভাবে এই সাদা সোনা খুঁজে বার করেন কিন?
প্রতি দিন ভোর হলেই তিন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে সাদা সোনার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন কিন। উত্তর অতলান্তিকের নিউফাউন্ডল্যান্ডে সারা দিন ধরে নৌকায় ভেসে সংগ্রহ করেন এই ‘সাদা সোনা’। তারপর ‘সাদা সোনা’র সেই বিশাল চাঁই নৌকার পিছনে বেঁধে ফিরে আসেন।
কী এই সাদা সোনা? সাদা সোনা আসলে অতলান্তিকের বুকে ভেসে বেড়ানো বিশালাকার বরফের স্তূপ যা হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে ভেসে আসে। বিপুল দামে এই বরফ বিক্রি করায় কিনের কাছে তা ‘সাদা সোনা’-ই।
বরফ গলা এই জল অত্যন্ত শুদ্ধ। বিভিন্ন নামী জল প্রস্তুতকারক সংস্থা, নামী প্রসাধনী দ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থা এই জল তাঁর থেকে কিনে নেয়। সেই জলই আরও শোধনের পর বিক্রি হয় প্রতি লিটার ৮৫০ টাকায়।
আর কোম্পানিগুলোকে বরফ গলা জল বিক্রি করে এক লিটার জলের জন্য ৭১ টাকা উপার্জন করেন কিন-রা।
তবে ‘সাদা সোনা’র খোঁজ করাটা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশালাকার ওই বরফের স্তূপ প্রথমে ভেঙে টুকরো করে, বা জাহাজের পিছনে বেঁধে সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে আসেন তাঁরা।
কখনও নৌকা করে কাছে গিয়ে কুড়ুল দিয়ে বরফের স্তূপ ভাঙা হয়, কখনও সেগুলোকে তাক করে গুলি চালান কিন। তাতে অনেক সময় বরফের স্তূপ ছোট খণ্ডে ভেঙে যায়। তারপর সেগুলো ওই পদ্ধতিতে নিয়ে আসেন।
তারপর বরফের টুকরোগুলোকে ভেঙে বড় বড় পাত্রে রাখা হয়। আস্তে আস্তে বরফ গলে জলে পরিণত হয়। এ ভাবে মে-জুলাই মাসে কিন-রা ৮ লক্ষ লিটার জল সংগ্রহ করেছেন। যা বিক্রি করে উপার্জন হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।
কিনের কথায়, এই ভাবে একেবারেই পরিবেশের ক্ষতি করছেন না তাঁরা। বরং বিশুদ্ধতম জল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে প্রকৃতির এই উপহারের সদ্ব্যবহার করছেন।
তবে শুধু কিন এবং তাঁর দলই নয়, এই ‘সাদা সোনা’র খোঁজে আরও অনেকেই এখন ঢুঁ মারছেন অতলান্তিকে।