ফ্রাঙ্ক ‘ক্যাননবল’ রিচার্ডস। বিস্ময়-ব্যক্তি বললেও কম বলা হয় তাঁকে। তাঁর রক্ত-মাংসে গড়া পেট কামান থেকে বার হওয়া তীব্র গতিসম্পন্ন লোহার গোলাও থামিয়ে দিতে পারত! সে কারণেই তাঁর নামের মাঝে ‘ক্যাননবল’ শব্দটি জুড়ে গিয়েছিল।
শরীরের মধ্যে পেটের অংশই সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল তাঁর। ওই অংশের পেশিকে এতটাই শক্ত করে ফেলতেন নিমেষে যে, হাতুড়ির ঘা, মানুষের লাফ এমনকি কামানের গোলাও কোনও ক্ষতি করতে পারত না।
জন্ম থেকেই এই গুণ নিয়ে পৃথিবীতে আসেননি তিনি। স্বতন্ত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম এবং পেটের পেশিকে শক্ত করে তোলার অভ্যাস এবং অনুশীলনের ফল পেয়েছিলেন তিনি। এমনটাই দাবি ছিল ফ্রাঙ্কের।
১৮৮৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার মিনিয়াপোলিসের একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম ফ্রাঙ্কের। বাবা রিচার্ড জোনস এবং মা এলেন এলিজাবেথ। ফ্রাঙ্করা ছিলেন তিন ভাইবোন।
মঞ্চে পেশিশক্তি প্রদর্শনের আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসাবে লড়েছিলেন ফ্রাঙ্ক। ১৯২৪ সাল নাগাদ জনপ্রিয়তা পান তিনি।
প্রচুর অনুশীলন করার পর ফ্রাঙ্ক ‘ক্যাননবল’ রিচার্ডস হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কী কী করতে হয়েছিল তাঁকে?
প্রতি দিন ভারী জিনিস দিয়ে পেটে আঘাত করতেন ফ্রাঙ্ক। কখনও বন্ধুদের বলতেন বড় হাতুড়ি দিয়ে পেটে আঘাত করতে, কখনও সজোরে ঘুষি মারতে বলতেন। পুষ্টিকর খাবার এবং শরীরচর্চা তাঁর রোজকার রুটিন ছিল।
এক বার মাটিতে শুয়ে থাকা অবস্থায় পর পর একাধিক ব্যক্তি দৌড়ে এসে তাঁর পেটে লাফিয়ে পড়ছিলেন। সেই তীব্র আঘাতও সহ্য করে নিয়েছিল তাঁর পেটের পেশি।
একটি শো-তে আমেরিকার বক্সার জেস উইলার্ডকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক। উইলার্ড একাধিক বার তাঁর পেটে ঘুষি মারেন। পেটের পেশি শক্ত করে নিয়ে সেই সমস্ত আঘাতের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি।
তবে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল কামান নিয়ে। একটি কামানের সামনে খালি গায়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কামানের মুখের কাছে তাঁর পেট ছিল। যাতে কামান থেকে গোলা বেরিয়ে সরাসরি পেটেই আঘাত করতে পারে।
একটি বড় আকারের লোহার বল কামানের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার পর কামান চালিয়ে ওই লোহার গোলা ছোড়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে গোলাটি ফ্রাঙ্কের পেটে ধাক্কা মারে। পিছনে ছিটকে পড়ে যান ফ্রাঙ্ক। আর তার পরই উঠে দাঁড়িয়ে হাত তুলে দর্শকদের বুঝিয়ে দেন তিনি ঠিক আছেন।
তাঁর এই পারফরম্যান্স সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল। ১৯৬৯-এর ৭ ফেব্রুয়ারি ৮১ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর একাধিক তথ্যচিত্র হয়েছে তাঁকে নিয়ে। প্রচুর সিনেমায় পেট দিয়ে কামানের গোলা প্রতিহত করার ছবিও দেখানো হয়েছে।