ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে আয়োজিত আসিয়ান বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন মায়ানমারের সেনাপ্রধান তথা জুন্টা শীর্ষ নেতা মিন আউং হ্লাইং। শনিবার থাইল্যান্ডের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আউং সান সু চি-র নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মসনদ দখল করার পরে এই প্রথম কোনও সামরিক নেতা আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছেন।
থাইল্যান্ডের বিদেশ মন্ত্রক গত কাল জানিয়েছে, আসিয়ান সম্মেলনে সদস্য দেশগুলির বহু শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন মায়ানমারের সেনাপ্রধান হ্লাইংও। তবে জুন্টা সরকার এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কিছু জানায়নি। ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু ১০ দেশের বৈঠকে মায়ানমারের ‘সঙ্কট’ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
মায়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থায় এখনও পর্যন্ত প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। প্রতিবাদের সুর দমিয়ে দিতে সেনা-পুলিশের আক্রমণে এখনও পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭২০ জনেরও বেশি। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩,১০০ জনেরও বেশি মানুষকে। ধৃতের তালিকায় রয়েছেন, সাংবাদিক, তারকা, সমাজকর্মী, চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
নিরস্ত্র মানুষের উপরে সশস্ত্র বাহিনীর হামলার নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। আসিয়ানের বিভিন্ন সদস্য দেশও রক্তপাত বন্ধের আর্জি জানিয়েছে জুন্টা সরকারের কাছে। ইতিমধ্যেই ভারত জানিয়েছে, আইনের শাসন বলবৎ হোক মায়ানমারে। সেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসাকে সমর্থন করে ভারত।
জুন্টা সরকারের তরফে অবশ্য সামরিক অভ্যুত্থানের পক্ষে সওয়ালে বলা হয়েছে যে, নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে। সঠিক জনমতের প্রকাশ ঘটেনি। সে জন্যই বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল সু কী সরকার। সেনার তরফে জানানো হয়, আগামী এক বছরের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করে শাসনভার ফেরানো হবে অসামরিক প্রশাসনের হাতে। যদিও সম্প্রতি সেই সময়সীমা বাড়িয়ে দু’বছর করা হয়েছে।
সামরিক প্রধানের আসিয়ান বৈঠকে যোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার দিনেই জুন্টা সরকার জানিয়েছে, ২৩ হাজার বন্দিকে নববর্ষ উপলক্ষে ক্ষমা করে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু তার মধ্যে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীরাও রয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রতি বছরে নববর্ষের দিনটি জাঁকজমক ভাবে পালন করা হলেও এ বারে অবশ্য সেনাবিরোধী আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন প্রতিবাদীরা। সম্প্রতি অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে জুন্টা সরকার। সেই তালিকায় রয়েছেন ৮০ জন চিকিৎসকও। তাঁদের বিরুদ্ধে শান্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে। পাল্টা স্বাস্থ্যকর্মীরাও জানিয়েছেন, সামরিক শাসনে কাজে যোগ দেবেন না তাঁরা। এর জেরে অতিমারিতে বহু হাসপাতাল কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে। সঙ্কট তৈরি হয়েছে চিকিৎসা পরিষেবায়।