আমেরিকান মুদ্রায় মায়া অ্যাঞ্জেলু।
এত দিন এই মুদ্রার এক পিঠে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের মুখ থাকত। অন্য পিঠে এক ঈগলের ছবি। বিগত ৯০ বছর এমন রীতিই চলে এসেছে। তবে এ বার সেই রীতি ভাঙছে আমেরিকায়। দেশের ২৫ সেন্টের (আমেরিকায় যা কোয়ার্টার নামে প্রচলিত) কয়েনে দেখা যাবে কবি, সাহিত্যিক ও আন্দোলনকারী মায়া অ্যাঞ্জেলুর ছবি। এই প্রথম আমেরিকান কোয়ার্টারে কোনও আফ্রো আমেরিকান বংশোদ্ভূত মহিলার ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত কাল আমেরিকান মিন্ট (টাঁকশাল) কর্তৃপক্ষের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ২৫ সেন্টের ওই বিশেষ মুদ্রার উদ্বোধন করা হয়। ডেনভার ও ফিলাডেলফিয়ায় তৈরি ওই মুদ্রা বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে ২৫ সেন্টের ওই মুদ্রার এক পিঠে থাকবে কৃষ্ণাঙ্গ মায়ার ছবি আর অন্য পিঠে ওয়াশিংটনের।
গত বছর জানুয়ারি মাসে ‘আমেরিকান উইমেন কোয়াটার্স প্রোগ্রাম’ সংক্রান্ত একটি আইন পাশ হয়েছিল। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর কোয়ার্টারে এক জন করে উল্লেখযোগ্য আমেরিকান মহিলার ছবি প্রকাশ করা হবে। টাঁকশালের ডেপুটি ডিরেক্টর ভেনট্রিস গিবসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমেরিকার ইতিহাসে যে সব নারীর অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে, তাঁদের উৎসর্গ করা মুদ্রা প্রকাশ্যে আনতে পেরে আমরা গর্ব বোধ করছি।’’ আমেরিকান কোষাগারসচিব জ্যানেট ইয়েলেনও বলেছেন, ‘‘আমেরিকার কিছু অসাধারণ নারী চরিত্রকে
মুদ্রার মাধ্যমে সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।’’
মায়ার মতো একই সম্মান দেওয়া হবে মহাকাশে পা রাখা প্রথম আমেরিকান মহিলা স্যালি রাইড, নিউ মেক্সিকান নারী অধিকার রক্ষা কর্মী নীনা ওটেরো-ওয়ারেন, চিনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান চিত্র তারকা অ্যানা মে ওং এবং চেরোকি জনজাতি বংশোদ্ভূত নেত্রী উইলমা ম্যানকিলারকে।
১৯২৮ সালে আমেরিকার মিসৌরিতে জন্মেছিলেন ‘আই নো হোয়াই দ্য কেজ্ড বার্ড সিংস’-এর স্রষ্টা মায়া অ্যাঞ্জেলু। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনে এক সময়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং ম্যালকম এক্সের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এই কবি। ২০১৪ সালে মৃত্যু হয় তাঁর।
আমেরিকান মুদ্রায় প্রাক্তন দাস ও দাসপ্রথা বিলোপ আন্দোলনের নেত্রী হ্যারিয়েট টাবম্যানের ছবি প্রকাশের ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন কোষাগারসচবি জ্যানেট। মূলত বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই ২০ ডলারের নোটে হ্যারিয়েটের ছবি প্রকাশ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তা কার্যত হিমঘরে চলে যায়। গত সেপ্টেম্বরেই জ্যানেটকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘টাবম্যানের মতো মহিলা নেত্রীর ছবি নোটে প্রকাশ করা গর্বের বিষয়। কিন্তু ব্যাঙ্কনোটের নকশা পরিবর্তনের কিছু নিয়ম রয়েছে যা সময়সাপেক্ষ।’’