বিপর্যয়ের পর তিন দিন কাটলেও ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও পৌঁছতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ছবি: এএফপি।
ভূমিকম্প-সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ায় মৃত ৮৪৪ জনের গণকবর খোঁড়া শুরু করল সরকার। বিপর্যয়ের পর তিন দিন কাটলেও সুলাবেসি দ্বীপের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও পৌঁছতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার মুখপাত্র সুটোপো পুরবো নুগরোহো জানিয়েছেন, যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁরা খাবার, পানীয় জল, জ্বালানির জন্য দোকানপাট লুট করছে। লুটের হাত থেকে বাঁচাতে ত্রাণবাহী গাড়িগুলি পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পালুতে পাহাড়ের উপরে গণকবর তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। মৃতদেহ নিয়ে একের পর এক ট্রাক এসে উপস্থিত হচ্ছে সেখানে। আশ্রয় শিবিরগুলিতে আহতদের শয্যার পাশে পড়ে রয়েছে মৃতদেহের সারি। কটূ গন্ধে ভারি স্বাস্থ্য শিবিরের বাতাস। পরিবারের থেকে বহু শিশু বিচ্ছিন্ন। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।
এ দিকে আইনমন্ত্রক জানিয়েছে, দুর্যোগের সুযোগে সুলাবেসি দ্বীপের তিনটি জেল ভেঙে অন্তত ১২০০ বন্দি পালিয়ে গিয়েছে। ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে যাওয়া দেওয়াল টপকে পালুর একটি জেলের ৫৮১ জন কয়েদির অধিকাংশ পালিয়েছে। ওই শহরেই অন্য একটি জেলের দরজা ভেঙে পালিয়েছে বন্দিরা। সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ডঙ্গালা শহরের একটি জেলে আগুন ধরিয়ে দেন কয়েদিরা। সেখান থেকেও নিখোঁজ ৩৪৩ বন্দি। জেল কর্তৃপক্ষ জানান, ভূমিকম্পের খবর পেয়ে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কারা-কর্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কির মধ্যেই জেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
বিপর্যস্ত: শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে বাড়ির উপরে উঠে গিয়েছে গা়ড়ি। তলা দিয়েই চলছে যাতায়াত। সোমবার সুলাবেসিতে। ছবি: এএফপি।
বিপর্যয়ের তিন দিন পরেও পালুর রাস্তায় ধ্বংসস্তূপ আর মৃতদেহের সারি। সোমবার মৃত বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪৪। যন্ত্র দিয়ে কংক্রিটের চাঁই সরানো শুরু হলে আরও মৃতদেহ উদ্ধার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ পালু বিমানন্দর।
আরও পড়ুন: ‘লড়াই চালিয়ে নিয়ে যেতে আপনি-ই আমাদের অনুপ্রেরণা’, সবিতাকে খোলা চিঠি এমার
পালুতে ভেঙে পড়া রোয়ারোয়া হোটেলের তলা থেকে গত কাল ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১১৪ জন বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করেছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই বাসিন্দা বাদে বিদেশিদের প্রত্যেকেরই খোঁজ মিলেছে। ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৭ লক্ষ ডলার ত্রাণের ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ১০ লক্ষ ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। পাশে থাকার আশ্বাস অস্ট্রেলিয়ারও। আন্তর্জাতিক সহায়তার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো।