ম্যারাথন অব দ্য স্যান্ডস। বালি ম্যারাথন। ধূ ধূ সাহারা মরুভূমি, মাথার উপর কড়া রোদ্দুর, আর এর মাঝেই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দৌড়। এমনটাও কি হয়?
মরক্কোয় সাহারা মরুভূমিতে এই রেসের ভাবনা প্রথম মাথায় আসে ফ্রান্সের এক ব্যক্তির।১৯৮৬ সালে প্রথম এই রেস চালু হয়েছিল।
প্যাট্রিক বাউচার নামের একজন ফরাসি প্রথম এই মরুভূমিতে ১২ দিন ধরে দৌড়েছিলেন ৩৫০ কিলোমিটার। পরে তিনি চিন্তা করলেন তিনি যদি পারেন, তাহলে অনেকেই এতে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। শুরুতে ২৩ জন অ্যাথলিট এই রেসে অংশ নিয়েছিলেন।
এই রেসকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম কঠিন রেস, প্রতি বছর ৩০টি দেশের প্রায় ৮০০ জন অংশ নেন এই রেসে।
২৫১ কিলোমিটারেরও কাছাকাছি পথ পাড়ি দিতে হয় এই রেসে। এই রেসের ভয়াবহতা নিয়ে হয়েছে সিনেমাও।
তবে এই রেসে রয়েছে ছটি ধাপ। একটি ধাপে কড়া রোদের মাঝে ফাঁকা ওই মরুভূমিতে পাড়ি দিতে হয় টানা ৮১ কিলোমিটার। মারাত্মক রোদ আর বালির মাঝে অংশগ্রহণকারীদের নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেকেই রাখতে হয়। ১৪ হাজার ক্যালরির খাবার নিতে হয় সঙ্গে ন্যূনতম।
নিজেদেরই পোশাক, স্টোভ, স্লিপিং ব্যাগ ও সারভাইভাল কিট সঙ্গে রাখতে হয়। সংস্থার তরফে শুধুমাত্র ১০ লিটার থেকে ১২ লিটার জল দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারীদের।
প্রথম দিন প্যারিস থেকে অংশগ্রহণকারীরা আসেন মরক্কোয়, দ্বিতীয় দিনে থাকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চেক আপ ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ। তৃতীয় থেকে নবম দিনের মধ্যে রেস ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হয়।
৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রা থাকে সাহারা মরুভূমিতে।প্রথম দিনে এই রেসে দৌড়াতে হয় ৩৩.৮ কিমি, দ্বিতীয় দিনে ৩৮.৫ কিমির কাছাকাছি।
তৃতীয় দিনে পেরোতে হয় ৩৫ কিমি, আর চতুর্থ দিনে পেরোতে হয় ৮১.৫ কিমি।
পঞ্চম দিনে পেরোতে হয় ৪২.২ কিমি, ষষ্ঠ দিনে পেরোতে হয় ১৫.৫ কিমি। সাহারায় রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের চেয়ে অনেকটাই নিচে। সেই ঠান্ডাতেও অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রতি বছরই এই রেসের ফর্ম্যাট বদলায়।
একটানা রোদে দৌড়ানো ছাড়াও রয়েছে বালিঝড়ের আশঙ্কা। রয়েছে বিষাক্ত সাপের কামড়ের আশঙ্কাও। হর্নড ভাইপার এর অন্যতম।
চলতি বছরের রেস হওয়ার কথা ৫ এপ্রিল। এই রেসের ‘রুট’ রেস শুরু হওয়ার ঠিক আগেই জানানো হয়। তার আগে পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।
এই ম্যারাথনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৪ সালে। বালিঝড়ে পথ হারিয়ে মূত্র পান করে, বাদুড়ের মাংস খেয়ে বেঁচেছিলেন মাউরো প্রসপেরি নামে এক অংশগ্রহণকারী। বাদুড়ের রক্ত, সাপ, টিকটিকি খেয়ে কার্যত প্রাণ বাঁচান তিনি। চার বছর পর ফের যোগ দেন ম্যারাথনে।