দু’-এক কোটি নয়। তিন হাজার কোটির বেশি সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। সম্পত্তির পরিমাণে দেশের তাবড় শিল্পপতিদের সঙ্গে এক সারিতে বসতে পারেন তিনি। এ হেন ধনকুবেরকে ভোটের ময়দানে নামিয়েছে মোদী-শাহের দল।
চলতি বছরের ২০ নভেম্বর হবে মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন। মরাঠাভূমে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আট হাজার প্রার্থী। একে একে মনোনয়ন জমা করছেন তাঁরা। আর সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রার্থীদের জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী এ বারের মহারাষ্ট্র ভোটে ধনীতম প্রার্থী হলেন পরাগ শাহ। ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) হয়ে ঘাটকোপার পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। ওই কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়কও তিনি।
বিধানসভা ভোটের সময়ে প্রার্থীদের মনোনয়নে থাকা যাবতীয় নথি ওয়েবসাইটে আপলোড করে থাকে কমিশন। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী পরাগ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ৩,৩৮৩.০৬ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে বিজেপি প্রার্থীর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৫৭৫ শতাংশ। ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৫৫০.৬২ কোটির সম্পত্তি রয়েছে বলে মনোনয়নে উল্লেখ করেছিলেন ঘাটকোপার পূর্বের বিধায়ক।
শাহ জানিয়েছেন, তাঁর হাতে থাকা অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩,৩১৫.৫২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৬৭.৫৩ কোটি স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে এই বিজেপি প্রার্থীর।
বিধায়ক পরাগের রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা রয়েছে। মনোনয়নে স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মিলিয়ে মোট সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, এ ক্ষেত্রে কোনও তথ্য গোপন করেননি বলেও দাবি করেছেন পদ্মের প্রার্থী।
বর্তমানে ‘এমআইসিআই গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন শাহ। গত ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছে এই সংস্থা। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় খবরের শিরোনামে চলে আসেন পরাগ। পরে অবশ্য সুস্থ হয়ে কাজে ফেরেন তিনি।
ভোটের টিকিট পাওয়ার পর বছর ৫৫-র পরাগ জানিয়েছেন একদম সুস্থ রয়েছেন তিনি। এর পর নিজের অসুস্থতা নিয়ে নাম না করে বিরোধীদের নিশানা করেন তিনি। বলেন, ‘‘রাজনীতি একটা অদ্ভুত জিনিস। এখানে আপনার যদি সর্দিকাশির সমস্যা হয়, তা হলেও যক্ষ্মা হয়েছে বলে রটিয়ে দেওয়া হবে।’’
পাশাপাশি, বিপুল সম্পত্তির বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মহারাষ্ট্রের ধনীতম পদ্মপ্রার্থী। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর পরাগ বলেছেন, ‘‘সৎ ভাবে নির্বাচন লড়তে এসেছি। তাই যে সম্পদ অর্জন করেছি, তা প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে কোনও ভয় নেই। বিরোধীরাও আমার গায়ে দুর্নীতির কাদা ছিটোতে পারবেন না।’’
পাশাপাশি তিনি যে সমাজসেবা করছেন, তা জানাতে ভোলেননি মরাঠাভূমের পদ্মপ্রার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকের কাছেই সম্পদ থাকে। আমি সেটাকে সদ্ব্যবহারের তাগিদ অনুভব করতে হয়। বিশ্বাস করি, ঈশ্বর এবং দেশ আমাকে সব কিছু দিয়েছে। অতএব আমারও কিছু দেওয়া উচিত।’’
এর পরই নিজেকে নেতা, ব্যবসায়ী এবং সমাজকর্মী হিসাবে দাবি করেছেন পরাগ। নিজের সঞ্চয়ের ৫০ শতাংশ সমাজসেবার জন্য খরচ করছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই নিয়ে বিরোধীদের তরফে অবশ্য কোনও খোঁচা আসেনি।
২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোটে এ বারের লড়াই মূলত দু’টি জোটের মধ্যে। একটি হল ‘মহাজুটি’। অপরটির নাম ‘মহাবিকাশ আঘাড়ি’। এ ছাড়া আলাদা ভাবে লড়াই করছে রাজ ঠাকরের ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’।
মহাজুটিতে রয়েছে শাসকদল বিজেপি, শিব সেনা (শিন্ডে শিবির) এবং এনসিপির অজিত পওয়ার গোষ্ঠী। এখনও পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তিন দল। তবে শেষ পর্যন্ত ১৫৫টি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকটি আসনে শিন্ডে সেনা এবং অজিত পওয়ারের দলের প্রার্থীরাও রয়েছেন। যাঁদের নাম প্রত্যাহারের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্য দিকে, মহাবিকাশ আঘাড়িতে রয়েছে কংগ্রেস, শিব সেনার উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী এবং এনসিপির শরদ পওয়ার গোষ্ঠী। এখানে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, মহাবিকাশ আঘাড়িতে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, একই আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে উদ্ধব গোষ্ঠী বা শরদ পওয়ার গোষ্ঠীর প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যেতে পারে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে শিবসেনার সঙ্গে জোট করে ভোটের ময়দানে নেমেছিল বিজেপি। ফলঘোষণার পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিয়ে বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে মতান্তর শুরু হয়। ফলে জোট ভেঙে অজিত পওয়ারের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে পদ্মশিবির। মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস।
কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার বেশি সেই সরকার টেকেনি। দু’দিনের মধ্যেই সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন অজিত। এর পর কংগ্রেস এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে জোট করে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করে শিবসেনা। মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব ঠাকরে। ওই সময়েই তৈরি হয় মহাবিকাশ আঘাড়ি।
২০২২ সালে একনাথ শিন্ডে-সহ একাধিক বিধায়ক দল ছেড়ে বেরিয়ে গেলে আড়াআড়ি ভাবে ভেঙে যায় শিবসেনা। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় উদ্ধব সরকার। এ বার শিন্ডে শিবিরের বিধায়কদের সমর্থন করে বিজেপি। ফলে একনাথের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয় মহারাষ্ট্রে।
গত বছর (২০২৩) শরদ পওয়ারের দল ভেঙে অজিত পওয়ারের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসেন বেশ কয়েক জন বিধায়ক। তাঁরাও শিন্ডে-বিজেপি সরকারে যোগ দেন। উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পান অজিত। বিজেপির থেকে উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস।