ছবি সৌজন্যে: রয়টার্স
বিশ্বে করোনার প্রকোপে মৃতের সংখ্যা পেরোল ১১ লক্ষ। সংক্রমণের জেরে উধাও ইউরোপের নানা শহরের চেনা ছবিও। যে শহরটা সারা বছর প্রাণচঞ্চল থাকে, মারণ ভাইরাসে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। খাঁ খাঁ করছে আইফেল টাওয়ারের আশপাশের এলাকা। রাস্তার ধারে কাফে-রেস্তরাঁগুলো বন্ধ। ল্যুভর মিউজ়িয়ামের সামনে ভিড় নেই। নোত্র দাম গির্জার সামনে উৎসুক মুখের আনাগোণা নেই। মাঝের সময়ে কিছুটা পুরনো চেহারায় ফিরেছিল প্রেমের শহর প্যারিস। ফের জারি ফতোয়া।
আগামী শনিবার থেকে প্যারিস, লিয়ঁ, মার্সেই, তুলুস-সহ ফ্রান্সের মোট ন’টি শহরে কার্ফু জারি হতে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ আজ সরকারি টিভি চ্যানেলে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমাদের কিছু একটা করতেই হবে। যে ভাবে সংক্রমণ ঘটছে, সেটা আটকাতেই হবে।’’ দিনের বেলা আংশিক খোলা থাকবে শহর। রাত ন’টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত ‘শাটডাউন’ চলবে। আগামী ছ’মাস এই নিয়ম বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ৭ কোটির দেশে অন্তত ২ কোটির উপরে বলবৎ হবে নয়া নিয়ম।
কড়াকড়ি বেড়েছে জার্মানিতেও। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ‘‘একটা বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট, এখন আমরা যা করব, সেটাই ঠিক করে দেবে কী ভাবে অতিমারি-পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব আমরা।’’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা স্পেনের। ৯ লাখের উপরে সংক্রমিত। মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজারেরও বেশি। মাদ্রিদে লকডাউন জারি হয়েছে। ক্যাটালোনিয়ার একাংশেও পাব, রেস্তরাঁ বন্ধ আগামী ১৫ দিনের জন্য।
আরও পড়ুন: সেনাকে যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন চিনফিং
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজো আছে, তবে দুর্গোৎসব নেই
গত বুধবার এক দিনে ৭৩৩২ জন সংক্রমিত হয়েছে ইটালিতে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দৈনিক সংক্রমণ। রোমে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কোনও পার্টি নয়, ছোটদের ফুটবল ম্যাচ নয়। বন্ধ পানশালা। লন্ডনেও ফের পুরনো কড়াকড়ি ফিরছে। পাব-রেস্তরাঁয় দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ। খুব প্রয়োজন ছাড়া সরকারি যানে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা। তা ছাড়া, ছ’জনের বেশি এক জায়গায় জড়ো হওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই। এসেক্স, লিভারপুল, ম্যাঞ্চেস্টারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
‘আর লকডাউন চলবে না’, এই দাবিতে গত দু’তিন সপ্তাহে একাধিক বিক্ষোভ দেখেছে লন্ডন। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে, সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৫০০ পাউন্ড অর্থসাহায্য দেওয়া হবে। কিন্তু এ ধরনের আংশিক লকডাউনে কোনও সরকারি সাহায্য মিলবে না জানিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন লন্ডনের পাব-রেস্তরাঁ মালিকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আরও খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লাম আমরা। যে-হেতু পুরোপুরি বন্ধ থাকছে না, কোনও সাহায্য পাব না। অথচ সারাদিনে যথেষ্ট গ্রাহক হবে না। লাভের মুখ দেখব না কেউ।’’ লন্ডনের মেয়র সাদিক খান আজ বলেন, ‘‘কেউ আর লকডাউন চায় না। কিন্তু আর কোনও উপায় নেই।’’ এর মধ্যেই আজ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ৫ মিনিটে করোনা-আক্রান্ত কি না জানা যাবে, এমন একটি পরীক্ষা-পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তারা। দ্রুত চিকিৎসা শুরুর জন্য যা খুবই উপকারি হবে।
সহ প্রতিবেদন: শ্রাবণী বসু