ওলেনিভকার জেলে হামলার দায় স্বীকার করুক রাশিয়া— এই দাবিতে কিভের রাস্তায় ইউক্রেনীয়দের বিক্ষোভে শামিল খুদেও। শনিবার। রয়টার্স
তারা কারাগারে বন্দি। ফলে পালানোর কোনও উপায় ছিল না। গত কাল রকেট হামলায় জেলের গারদেই মরতে হল ৫০-এর বেশি ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে। গুরুতর জখম অনেকে। কারাগারটি বর্তমানে ইউক্রেনের রুশ-সমর্থনপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী অধিকৃত ডনেৎস্কের ওলেনিভকা এলাকায়। এই ঘটনায় ইউক্রেন রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলেছে। বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ ও রেড ক্রসের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। আমেরিকার কাছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বার্তা, ‘‘ওদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর সেটা এখনই নিতে হবে।’’ রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনই হামলা চালিয়েছিল ওই কারাগারে। অথচ, এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে ব্রিটেনের রুশ দূতাবাস জানিয়েছে, ওরা এই পরিণতিরই ‘যোগ্য’।
একটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করা যায়নি। তাতে দেখা যাচ্ছে, জেলের বাঙ্ক-বেড ভাঙাচোরা অবস্থায়, ভয়ানক ভাবে পুড়ে যাওয়া দেহ। ঠিক যে কী ঘটেছিল, তা একেবারেই অস্পষ্ট। ঘটনাস্থল অর্থাৎ ওলেনিভকা বর্তমানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ডনেৎস্ক পিপল’স রিপাবলিক’-এর নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনের দাবি, জেলে যুদ্ধবন্দিদের উপরে ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে বহু বন্দিকে। প্রমাণ লোপাট করতে রাশিয়াই ওই হামলা চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে জ়েলেনস্কির দাবি, ‘‘এটি রাশিয়ার ইচ্ছাকৃত হামলা। যুদ্ধাপরাধ।’’ রাশিয়ার পাল্টা দাবি, ইউক্রেন রকেট হামলা চালিয়েছিল ওই জেলে।
ওলেনিভকার ওই জেলে মূলত ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল আজ়ভ ব্যাটেলিয়নও, মারিয়ুপোলে যারা লড়েছিল। মারিয়ুপোল দখল করার পরে যুদ্ধবন্দিদের এই জেলে পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের এই সেনাদের রাশিয়া ‘নব্যনাৎসি’ বলে দাবি করেছিল। ‘যুদ্ধাপরাধী’ চিহ্নিত করে তাদের জেলে ঢোকানো হয়েছিল।
রাশিয়া হামলার দায় ইউক্রেনের ঘাড়ে ঠেললেও গত কাল হামলার পরে ব্রিটেনের রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়, ‘‘জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। তবে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা নয়। ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। ওরা সত্যিকারে সেনা নয়। ওরা অসম্মানের মৃত্যু পাওয়ারই যোগ্য।’’
‘ডনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’-এর মুখপাত্র ডানিল বেজ়সোনোভ আজ জানিয়েছেন, একেবারে জেল লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, হামলায় আমেরিকার তৈরি হিমার আর্টিলারি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাদের বক্তব্য, যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালতে ওই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। অথচ ওই জেলে বন্দিদের সকলেই প্রায় ইউক্রেনীয়। নিহতদের মধ্যে কোনও রুশ নাগরিক নেই। ফলে রাশিয়ার ব্যাখ্যার যুক্তি মিলছে না।
রাষ্ট্রপুঞ্জ ও রেড ক্রসের কাছে সাহায্য চেয়েছে ইউক্রেন। রেড ক্রস জানিয়েছে, তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত। ওই এলাকায় প্রবেশের পথ খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। একটি বিবৃতি জারি করে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘‘আমাদের এই মুহূর্তে লক্ষ্য, যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আর এটা দেখা, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা যেন শেষ সম্মানটুকু পান।’’