গ্রেফতার আব্দুল মাজেদ। —নিজস্ব চিত্র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ প্রথমে লিবিয়া ও পাকিস্তানে আত্মগোপনে ছিলেন, তারপর কলকাতায়। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আবদুল মাজেদ নিজেকে ‘আবদুল মজিদ’ পরিচয় দিয়ে অবস্থান করেছেন প্রায় ২৫ বছর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশে ফিরে গ্রেফতার হয়েছেন সেই আবদুল মাজেদ। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও জারি রয়েছে।
মার্চের মাঝামাঝি তিনি ভারত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন মাজেদ– এই তথ্যের সূত্রে ঢাকার মিরপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। মাজেদ শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডেই অংশগ্রহণ করেননি– ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত জাতীয় চার নেতার হত্যাতেও অংশ নিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে আবদুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। পুলিশ মাজেদকে আদালতে তোলে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে সরকারি কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন খান সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, ”বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এত দিন আপনি কোথায় ছিলেন? জবাবে খুনি মাজেদ বলেন, ২২-২৩ বছর তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন। সেখান থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।”
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত ৫০৮, মৃত্যু ১৩ জনের
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে আবদুল মাজেদ প্রথমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান বলে জানা গিয়েছে, ভারত থেকে পালিয়ে তিনি প্রথমে যান লিবিয়ায়। সেখান থেকে আসেন পাকিস্তানে। লিবিয়া ও পাকিস্তানে সুবিধা করতে না পেরে আবারও ভারতে ফিরে আসেন। বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে কলকাতায় অবস্থান করছিলেন তিনি। কলকাতায় থাকার সময় মাজেদ তেমন কিছু করতেন না। বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগযোগও ছিল নিয়মিত। মার্চের মাঝামাঝি ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফেরার পর মিরপুরের বাসায় ওঠেন।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ”গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, আবদুল মাজেদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে আটক করা হয়।”
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না দিলে ‘ফল’ ভুগতে হবে, ভারতকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, নূর ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিন— এই তিন জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।“
আবদুল মাজেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া যান। পরে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান তাঁকে সেনেগালের দূতাবাসে নিযুক্ত করেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে উপসচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ করা হয়। পরে তিনি আরও কিছুদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদ অধিকার করে ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরুর সময়ে পালিয়ে যান মাজেদ।
বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের ফাঁসি থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।