চিন্তায় মলদ্বীপবাসী। — ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তিন মন্ত্রীর কুমন্তব্য। তার জেরে ভারত এবং মলদ্বীপের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বিষয়টিকে মলদ্বীপের নতুন সরকার খুব একটা আমল দিতে না চাইলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু উদ্বিগ্ন। প্রতিবেশী আচমকা চটে যাওয়ায় মাথায় হাত মলদ্বীপবাসীর। তাঁদের আশঙ্কা, দ্বীপরাষ্ট্রের মূল রোজগারের উৎস পর্যটন শিল্প এ বার মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। বেশ কিছু খাবারের জন্য তারা নির্ভরশীল ভারতের উপর। সেই খাবারের জোগান বন্ধ হতে পারে বলেও আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।
গত বছর মলদ্বীপে সব থেকে বেশি পর্যটক গিয়েছেন ভারত থেকে। সে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সব থেকে বেশি অবদান ভারতীয়দেরই। এ হেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষদ্বীপকে নিয়ে একটি পোস্ট দেখে কুমন্তব্য করেন মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে মোদীকে ‘জোকার’, ‘ইজ়রায়েলের হাতের পুতুল’ বলে উল্লেখ করেন। তার পরেই ভারতে ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ডাক দেওয়া হয়। পর্যটন সংস্থাগুলি মলদ্বীপে যাওয়ার বিমানের টিকিট বুকিং বাতিল করে। নড়েচড়ে বসে মলদ্বীপ। তাদের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, এই মন্তব্য মন্ত্রীদের ‘ব্যক্তিগত’। সরকারের মতামত নয়। তাতে যদিও দুই দেশের কূটনৈতিক চাপানউতর কমেনি।
চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা মলদ্বীপের জনসংখ্যা পাঁচ লক্ষ ২০ হাজার। খাবার, পরিকাঠামো, প্রযুক্তির জন্য তারা প্রতিবেশী বড় দেশগুলির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। মলদ্বীপের বাসিন্দাদের এখন উদ্বেগ, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক চাপানউতরের কারণে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে খাদ্য আমদানি। মলদ্বীপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মারিয়াম ইম শাফিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘‘ভারতের তরফে যে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা হতাশ। তার থেকেও বেশি আমরা হতাশ আমাদের সরকারকে নিয়ে। প্রশাসনের তরফে সুবিচারের অভাব রয়েছে।’’ শাফিক মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য, যা ‘ভারত-বন্ধু’ বলে পরিচিত। তিনি এও জানিয়েছেন, খাবার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল মলদ্বীপ।
মলদ্বীপের এক আইনজীবী আয়িক আহমেদ ইসা মনে করেন, যে তিন মন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত ছিল মুইজ্জু সরকারের। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপরই জোর দিয়েছেন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘‘তিন মন্ত্রীকে বহিষ্কার করা উচিত ছিল। ভারত এই নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেয়, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি। খাবারের জন্য আমরা ভারতের উপর নির্ভর করি অনেকটাই।’’
নভেম্বরে মলদ্বীপে ক্ষমতায় আসে মুইজ্জু সরকার। চিন-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত মুইজ্জু। দিন কয়েক আগে চিনে গিয়েছিলেন মুইজ্জু। সেখানে গিয়ে তিনি চিন থেকে আরও বেশি করে পর্যটক পাঠানোর আর্জি জানান। অতিমারির শুরুর আগে চিন থেকে প্রচুর পর্যটক মলদ্বীপে আসতেন। কোভিডের কারণে সেই সংখ্যাটা কমে যায়। মুইজ্জু সেই নিয়েই আবেদন করেন। তার পরেই ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই আবহে লক্ষদ্বীপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেখে কুমন্তব্য করেন তিন মন্ত্রী। তাতেই বিপত্তি বেড়েছে।