১৯৬৪ সালে মাত্র ৫ পাউন্ড দিয়ে কেনা একটি দাবার ঘুঁটি যে কোনও দিন ‘অ্যান্টিক’ আখ্যা পাবে, তা কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যান্টিক জিনিসপত্র বিক্রেতা স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী ৮.৮ সেন্টিমিটারের এই ঘুঁটিটি আরেক অ্যান্টিক বিক্রেতার কাছ থেকেই কিনেছিলেন। কিন্ত তারা কেউই এর ঐতিহাসিক মূল্য বুঝতে পারেননি।
তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর মেয়ে এই ঘুঁটিটি দেখভাল করেন বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে।
এই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একজন বলেন, “ঘুঁটিটি যে গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। তবে দামের চেয়ে এর অলৌকিক শক্তিই বেশি ভাবাত তাঁদের। এর আসল মূল্য সম্পর্কে তিনিও জানতেন না।”
তাঁদের ড্রয়ারেই প্রায় ৫৫ বছর ধরে এই ঘুঁটিটি রাখা ছিল। উদ্ধার হওয়া এই অংশটি একটি প্রহরীর, যার মাথায় হেলমেট, হাতে তলোয়ার।
এই পরিবারের অ্যান্টিক সংগ্রহ দেখতে রোজই বহু মানুষ আসেন। আলেকজান্ডার ক্যাডার নামক এক বিশেষজ্ঞের প্রথম এই ঘুঁটি দেখে সন্দেহ হয়।
তিনি বলেন, “আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা আবিষ্কার এটি। দীর্ঘ ৬ মাস রিসার্চ চালানোর পর সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত হয়ে তবেই ঘোষণা করা হয়েছে এই দাবার ঘুঁটি সম্পর্কে।”
১৮৩১ সালে প্রথম এই ৯৩ পিস ‘ওয়ালরাস টাস্ক ওয়ারিয়র চেসম্যান’ সেট উদ্ধার করা হয়। স্কটল্যান্ডের লুইস আইলের এক বালির স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় এটি।
এর মধ্যে মোটামুটি ৮২টি ঘুঁটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ও ১১টি স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রাখা আছে।
এই দাবার বোর্ডের বিশেষত্ব হল, এতে ৯৩টি ঘুঁটি আছে, যার মধ্যে রাজা রানি ছাড়াও বিশপ, যোদ্ধা, প্রহরী ও বোড়ে থাকে।
উদ্ধারের পরই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ৯৩টি টুকরো মিললেও ১টি যোদ্ধা ও ৪টি প্রহরীর হিসাব মিলছে না। যদিও সেগুলি অন্য কোনও বোর্ডের কিনা তার উত্তর মেলেনি।
আগামী মাসে নিলামে উঠবে এই ঘুঁটিটি। মনে করা হচ্ছে এর দর উঠতে পারে ৬ লক্ষ পাউন্ড থেকে ১ মিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭ কোটি টাকার কাছাকাছি।
মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে এটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। লন্ডনে নিলামে ওঠার আগে সাধারণ মানুষদের দেখার জন্য আরও একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
মনে করা হয়, ১২ শতাব্দীর শেষ ভাগে বা ১৩ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই ৯৩ পিসের দাবার বোর্ডটি নরওয়েতে তৈরি হয়েছিল। সম্ভবত এগুলি তৈরি হয়েছিল সেখানকার যোদ্ধাদের প্রতিকৃতি অনুযায়ী।
২ জুলাই লন্ডনের সদবির ‘ওল্ড মাস্টার স্কালপচার অ্যান্ড ওয়ার্ক অব আর্ট’-এ এটি নিলামে উঠবে।
প্রায় ২০০ বছর ধরে এই ঘুঁটিটির খোঁজ চলছিল।