করোনা-বিধি মেনেই ‘হাত মেলানো’। এক প্রতিষেধক কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সেনার সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয়। ছবি: রয়টার্স।
ভাল নেই লন্ডন। যে দিকে দু’চোখ যায়, খাঁ-খাঁ করছে রাস্তাঘাট। এক সময়ের জমজমাট বার, রেস্তরাঁগুলির ঝাঁপ ওঠে না কত কাল! ভিড় রয়েছে শুধু হাসপাতালগুলিতে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উপচে পড়া করোনা রোগীর ভিড়। কোথাও ১৬ জনের শয্যায় রাখা হয়েছে ৩০ জনকে। কোথাও আবার শয্যার অভাবে রোগী ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। আর রয়েছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন গড়ে হাজার খানেক মানুষের নাম উঠছে মৃতের তালিকায়। কাজের চাপে ক্লান্ত-শ্রান্ত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এই সব কিছুর জন্য বিশেষজ্ঞরা যাকে দায়ী করছেন, সেটি হল সদ্য-চিহ্নিত করোনার নয়া স্ট্রেন। যার বৈজ্ঞানিক নাম ভিওসি ২০২০১২/০১।
ব্রিটেন স্ট্রেন বলেই লোকে যাকে বেশি চেনে। মাসখানেক আগে ব্রিটেনে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল করোনাভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেনটি। অল্প সময়ের মধ্যেই তা বিশ্বের ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। গত এক সপ্তাহে আরও দশটি দেশে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে তারা। ভয়ের বিষয় একটাই, উহানে চিহ্নিত হওয়া পুরনো করোনা স্ট্রেনটির থেকে এটি অনেক বেশি সংক্রামক। বহু ক্ষেত্রে তা দ্বিতীয় সংক্রমণের কারণ হিসেবেও ধরা পড়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ আফ্রিকায় চিহ্নিত করোনার নয়া স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে অন্তত ৩১টি দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিও কম সংক্রামক নয়।
বিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, নতুন নতুন স্ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে বাজারে আসা করোনা প্রতিষেধকগুলি একই ভাবে কার্যকর না-ও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছে ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন এবং জার্মান সংস্থা ফাইজ়ার-বায়োএনটেক। তাদের তৈরি ভ্যাকসিন ব্রিটেন স্ট্রেনের ক্ষেত্রেও সমান কার্যকর বলে দাবি করেছে সংস্থাগুলি।
ব্রিটেন স্ট্রেনের দাপাদাপিতে এই মুহূর্তে বেহাল দশা বরিস জনসনের দেশেরই। জানুয়ারির মাঝামাঝি শ্বাসকষ্ট ও করোনা লক্ষণ নিয়ে লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জাস্টিন ফ্লেমিং। দিন পনোরো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ঘরে ফেরা বছর সাতচল্লিশের ফ্লেমিং বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের। জানালেন, হাসপাতালে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় সকলে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছেন। কেউ প্রবীণ চিকিৎসক। কেউ সদ্য পাশ করা। কেউ দাঁতের ডাক্তার, কেউ বা মস্তিষ্কের। সকলেই করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত।
গত বছর এই সময়েই ব্রিটেনে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ ছড়িয়েছিল। তবে গত বছর আর এ বছরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। লন্ডনের এক হাসপাতালের চিকিৎসক জেনি টাউনসেন্ড বললেন, ‘‘গত বছর রোগটা নতুন ছিল। কিন্তু চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবলও ছিল তুঙ্গে। এ বারে আমরা ক্লান্ত। জানি না কবে পরিস্থিতি আবার ঠিক হবে।’’