ছবি: এএফপি।
বিদেশে পড়তে এসে যে এ রকম অভিজ্ঞতা হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।
সপ্তাহ তিনেক হয়ে গেল, পুরোপুরি ঘরের মধ্যে আটকে থাকতে হচ্ছে। তবে আমরা জনা পাঁচেক বাঙালি পড়ুয়া একসঙ্গে রয়েছি বলে সময় কেটে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনলাইন ক্লাস চলছে। এর মধ্যে অনলাইন পরীক্ষাও দিলাম। খাবার, জলের সরবরাহ ধীরে ধীরে কমে আসছে। আমরা বন্ধুরা সকলে মিলে নিজেরাই রান্না করে খাই। কিন্তু চাল, ডাল, তেল ওয়ালমার্ট বা টার্গেটের মতো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে অর্ডার দিয়েও পাচ্ছি না। নিজেদের গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আনতে হচ্ছে। প্রত্যেককে চার থেকে পাঁচটি জিনিসের বেশি দেওয়া হচ্ছে না। টিসু পেপারও চারটি রোলের বেশি দেওয়া হচ্ছে না।
এখানে লকডাউনের বিষয়ে সরকারের কোনও নির্দেশ ছিল না। টেলিভিশন দেখে কী করণীয় আর কী করা উচিত নয়, তা নিজেরাই মোটামুটি ধারণা করে নিয়েছি। নিজেরাই গৃহবন্দি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছু দিন আগেও আশপাশের বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা চলত। ধীরে ধীরে সেই আনাগোনা বন্ধ হতে দেখলাম। রাস্তাঘাট জনশূন্য। বাস চলছে। কিন্তু যাত্রী প্রায় নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য লোকজন বাইরে বেরোচ্ছে। তবে পুরোটাই নিজস্ব গাড়ি বা উবারে। এখানকার উবার চালকেরা তাঁদের গাড়িতে স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস মজুত রাখছেন। অ্যারিজ়োনার যে শহরে রয়েছি তার নাম টেম্পি। কাউন্টির নাম ম্যারিকোপা। খবরে শুনলাম, অ্যারিজ়োনার মধ্যে এই কাউন্টিতেই সব থেকে বেশি করোনায় আক্রান্ত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রও আক্রান্ত।
যে হেতু আমার বিষয় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তাই গবেষণাগার ছাড়া পড়াশোনা করতে বেশ খানিকটা অসুবিধা হচ্ছে। দেড় মাসের বেশি হয়ে গেল, শেষবার ল্যাবে গিয়েছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সরকারি নির্দেশ এসে গিয়েছে। তাই এখন এ শহরের সবই বন্ধ। আগে নিয়মিত আবাসনের মাঠে আমরা ফুটবল খেলতে যেতাম। কিন্তু এখন আর ভরসা পাচ্ছি না। ঘরের মধ্যে থেকেই নিজের দেশের খবর নিচ্ছি টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল দেখে। বাবা, মা, আত্মীয়স্বজনের খবর বারবার ফোন করে নিচ্ছি। আমরা যারা দেশ থেকে ‘লোন’ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় এসেছি, টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হচ্ছি। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছি যে, গোটা দুনিয়ার এই অন্ধকারময় পরিস্থিতির খুব তাড়াতাড়ি ইতি ঘটবে।
(লেখক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া)
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)