ঢাকায় মশাল মিছিল। ছবি: এএফপি।
ছেলে অভিজিৎকে কুপিয়ে খুন করার পর তাঁর বাবা অজয় রায়কেও খুনের হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশের মৌলবাদী জঙ্গিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার বর্ষীয়ান এই অধ্যাপকের বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারা বসেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে একুশে বইমেলার বাইরে মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর পুলিশ এখনও অন্ধকারে। রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অজস্র মানুষের চোখের সামনে এমন ঘটনার পরে এক জন দুষ্কৃতীও গ্রেফতার না-হওয়ায় পুলিশের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। টিসিএস চত্বরের মতো এলাকায় পুলিশি নজরদারির অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খুনের পর ‘আনসারউল্লা বাংলা’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন টুইটারে তার দায় স্বীকার করেছে। খুনের পরে তারা উল্লাস প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘ইসলামের শত্রু নিকেশ হয়েছে। আমরা পেরেছি!’ বৃহস্পতিবারের দিনটিকে ‘মহান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিজিৎ ও তাঁ স্ত্রী রফিদা আহমেদ বন্যার রক্তাক্ত ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে আনসারউল্লা বাংলার পোস্টে। ২৪ তারিখ থেকেই যে অভিজিতের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছিল, এই টুইটারের পোস্ট থেকে তা স্পষ্ট। কয়েক দিন আগে লেখা হয়েছে, ‘টার্গেট মার্কিন নাগরিক। আমাদের ভয়ে সে ও দেশে বসবাস করছে। বইমেলায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছে।’ খুনের পরে লেখা হয়েছে, ‘টার্গেট ইজ ডাউন, আমরা সফল!’ টুইটটিতে দাবি করা হয়েছে, ‘প্যারিস ও কোপেনহাগেনে হামলার পরে আরও এক বড় সাফল্য! এ বার ঢাকায়।’
মুক্তমন নামে ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার জন্য তিন-চার বছর ধরেই হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিরা। আমেরিকা প্রবাসী অভিজিৎ বইমেলা ও একুশের ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৫ তারিখ ঢাকায় ফিরেছিলেন। পুলিশ কেন তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। শাহবাগ চত্বরে আজ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। রাতে মশাল মিছিল বার করে বিভিন্ন সংগঠন। ইমরান বলেন, “ঢাকার রাস্তায় হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দর, রাজশাহিতে অধ্যাপক শফিউলকে একই কায়দায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এ বার অভিজিৎ। জড়িতরা খোলাখুলি হুমকি দিচ্ছে। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে অবাধে খুন করে যাচ্ছে। পুলিশ আটকাতে পারছে না, অপরাধীদের গ্রেফতারও করতে পারছে না।”
মুক্তমনের মানুষ অভিজিৎ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে যাওয়ায় তাঁর দেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর পরিবার। অভিজিতের বাবা অজয় রায় এ দিন বলেন, “আমার ছেলেকে খুন করেছে উগ্র মৌলবাদীরা। তাদের পিছনে রয়েছে জামাতে ইসলামি।” অজয়বাবু জানান, তাঁকেও খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সবে তিনি ভয় পান না।
ময়নাতদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আততায়ীরা দক্ষ। কোথায় মারলে মানুষ মারা যায়, তা তাদের জানা ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই মৌলবাদী জঙ্গিরা গোপনে ঘাঁটি গেড়েছে বলে তাঁদের অনুমান। বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে ওই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আনসারউল্লা বাংলা নামে সংগঠনটির বিষয়ে বিশেষ তথ্য পুলিশের হাতে নেই। কয়েক মাস আগে রাজশাহিতে অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম খুনের পরে এই সংগঠন ফেসবুকে দায় স্বীকার করেছিল। কিন্তু তার পরেই তারা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়। এ বার তারা টুইটারকে হাতিয়ার করেছে। কিন্তু বিরোধীদের হরতাল-অবরোধের মধ্যেও বইমেলা চলাকালীন জনবহুল টিসিএস চত্বরে সন্ধ্যায় কেন পুলিশি নজরদারি থাকবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিসিটিভি-র ব্যবস্থা কেন নেই, তা নিয়েও ক্ষোভ জমেছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের অবশ্য একটাই আশ্বাস, শীঘ্র ধরা পড়বে দুষ্কৃতীরা।