মুন জাএ-ইন, দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট। —এএফপি।
আন্তর্জাতিক সমীকরণটা আচমকা কিছুটা বদলে দিল দক্ষিণ কোরিয়া। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেন উদারপন্থী নেতা তথা মানবাধিকার আইনজীবী মুন জাএ-ইন। প্রায় এক দশক পর কট্টরপন্থীদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে এমন এক জনকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া নির্বাচিত করল, যিনি আলোচনার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সমস্যা মেটানোর পক্ষপাতী। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি রুখতে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে সঙ্গে নিয়ে যখন সামরিক তৎপরতা তুঙ্গে তুলেছে আমেরিকা, ঠিক তখনই এমন এক জন নেতা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় মার্কিন পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।
গত কয়েক মাস ধরে প্রবল রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। প্রেসিডেন্টের ইস্তফার দাবিতে পথে পথেমুন জাএ-ইন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকা কট্টরপন্থী শাসনেও ইতি পড়ল। ফের ক্ষমতায় ফিরলেন উদারপন্থীরা।
আরও পড়ুন: চিন বাদ, নেপালের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী তালিকায় ঢুকল ভারত
এত দিন যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতের পক্ষপাতী ছিলেন। ফলে দুই কোরিয়ার সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছিল। কিন্তু নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জাএ-ইন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে। আমেরিকা আগ্রাসী নীতি নেওয়া সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি থেকে বিরত করা যায়নি, সুতরাং সমাধানের এক মাত্র পথ আলোচনা— এমনটাই মনে করেন নতুন প্রেসিডেন্ট। সোলে এ বার এ হেন মুনের জমানা শুরু হওয়ায় আমেরিকার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছিল আমেরিকা। মুন জাএ-ইন এ বার দক্ষিণ কোরিয়াকে আর সেই পথে হাঁটতে দেবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। আমেরিকার কথা মেনে নিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নেওয়াকে মুন একেবারেই সমর্থন করছেন না। বরং চিনের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু করারই পক্ষে দক্ষিণের নতুন প্রেসিডেন্ট। ফলে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি আমেরিকার জন্য আগের চেয়েও কঠিন হয়ে উঠল, বলছে ওয়াকিবহাল মহল।শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। অবশেষে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির গত ৬০ বছরের ইতিহাসে দুর্নীতির ্অভিযোগে প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট এই প্রথম বার। মঙ্গলবার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সেই রাজনৈতিক টানাপড়েনে আপাতত ইতি পড়ল।