দক্ষিণ আমেরিকার সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে রয়েছে আমাজনের বৃষ্টি অরণ্য। ব্রাজিলের উত্তর ও পূর্ব অংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঢেকে রয়েছে এই জঙ্গলে।
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের মারানহাও প্রদেশে রয়েছে লেনসয়েস মারেনহেনসিস জাতীয় উদ্যান। প্রাকৃতিক আশ্চর্যের অন্যতম নির্দশন রয়েছে এই এলাকায়।
সবুজে ঢাকা আমাজনের অরণ্যের ব্যতিক্রম ঘটে এখানে। অরণ্যের পাশেই এখানে রয়েছে মরুভূমি।
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বে অতলান্তিক মহাসাগরের উপকূলে রয়েছে এই মরু অঞ্চল। বছরের পর বছর ধরে সমুরের ঢেউয়ের বয়ে আনা বালি অরণ্যকে গ্রাস করেছে। আমাজনের অরণ্যের বিভিন্ন নদীর বয়ে আনা বালিও জমা হয় এখানে।
সেই বালিয়াড়িগুলিই এখানে গড়ে তুলেছে মরু অঞ্চল। এই বালির স্তূপের ব্যপ্তি প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার।
গ্রীষ্মে এখানে বালির তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেও। সে সময় প্রাণের চিহ্ন এখানে দেখা যায় না বললেই চলে।
কিন্তু বর্ষা আসতেই বিপুল পরিবর্তন ঘটে যায় এই এলাকার। বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত বদলে দেয় মরু অঞ্চলের প্রকৃতি।
আকাশ থেকে এই পরিবর্তন সবথেকে ভালভাবে বোঝা যায়। বর্ষার বৃষ্টি এই মরুভূমিকে বদলে দেয় জলাভূমিতে।
মরু অঞ্চলের মধ্যে তৈরি হয় হাজার হাজার ছোট ছোট উপহ্রদ। বালির নীচে থাকা পাথরের আস্তরণ বৃষ্টির জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার জেরে সেখানকার তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
সে সময় প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এই জাতীয় উদ্যানে। সাধারণত জিপ ও হেলিকপ্টারে করে এই প্রাকৃতিক বিস্ময় প্রত্যক্ষ করেন পর্যটকরা।
আমাজনের জঙ্গলে বাস করে পিনিঙ্গা কচ্ছপ। বর্ষা আসার আগে প্রবল উত্তাপের মধ্যেই তারা মরু অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে। যাতে বর্ষা এলেই তৈরি হওয়া হ্রদে পৌঁছে যাওয়া যায়। হ্রদে পৌঁছলেই পাওয়া যাবে খাবার।
বর্ষা বাড়তে থাকলে বালির বুকে তৈরি হওয়া উপহ্রদগুলির আকারও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে প্রচুর মাছেরও আগমন ঘটে সেখানে। পাশাপাশি মরুভূমিতে থাকা অন্য প্রাণীরাও এই জলের ব্যবহারে মরিয়া হয়ে ওঠে।
গ্রীষ্মে বালির নীচের স্তরে লুকিয়ে থাকে কলম্বিয়ান চার চোখের ব্যাঙ। বর্ষা এলে জলাশয়ও চলে আসে তাদের কাছে। এটাই তাদের প্রজনেন সময়। এক জোড়া ব্যাঙ প্রায় এক হাজার ব্যাঙাচির জন্ম দেয়।
এ ভাবে হ্রদে ভিড় জমানো অন্যান্য প্রাণীরাও বংশ বিস্তার করে। যে মরু অঞ্চলে প্রাণের উপস্থিতি প্রায় থাকেই না, সেখানেই ভরে যায় প্রাণের বৈচিত্রে।
বিভিন্ন গোত্রের প্রাণী ও পাখিদের সমাহার এই অঞ্চলের জীব বৈচিত্রকে অন্য মাত্রা দেয়। প্রাণ সৃষ্টির জন্য জলের ভূমিকা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই ঘটনা।
তবে বর্ষা কমলেই ফের বদলাতে শুরু করে এখানকার পরিবেশ। রোদের তাপে শুকিয়ে যেতে যাতে জল। গ্রীষ্ম বাড়তেই ফের শুষ্ক বালিয়াড়িতে পরিণত হয় এই এলাকা। প্রকৃতি যেন অপেক্ষা করতে থাকে পরবর্তী বর্ষার।