Laxmishanker Pathak

রাস্তার ঝাড়়ুদার থেকে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় খাবারের ব্র্যান্ড তৈরি করেন এই ভারতীয়

ইংরেজদের দেশে গিয়ে রাস্তায় ঝাড়ু দিতেন লক্ষ্মীশঙ্কর। পরs ঘুপচি রান্নাঘরে তাঁরা বানাতে শুরু করেন ভারতীয় খাবার। এখন সেটি ব্রিটেনের সবথেকে বড় ভারতীয় ফুড ব্র্যান্ড।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ১২:০৮
Share:
০১ ১৫

ব্রিটেনের বাজারে ভারতীয় খাবারের জগতে বিপ্লব এনেছিলেন লক্ষ্মীশঙ্কর পাঠক ও তাঁর স্ত্রী শান্তা গৌরি। ইংরেজদের দেশে গিয়ে রাস্তায় ঝাড়ু দিতেন লক্ষ্মীশঙ্কর। তাতে যা রোজগার হত, তাতে সংসার চলত না তাঁদের। তার পর ঘুপচি রান্নাঘরে তাঁরা বানাতে শুরু করেন ভারতীয় খাবার। ‘পাঠকস’ ব্র্যান্ডের সেই খাবার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে ব্রিটেনে। এখন সেটি ব্রিটেনের সবথেকে বড় ভারতীয় ফুড ব্র্যান্ড। কী ভাবে সফল হল এই যাত্রা?

০২ ১৫

সালটা ১৯৪০। লক্ষ্মীশঙ্কর পাঠক থাকতেন গুজরাতের গ্রামে। বড় অভাবের মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল তাঁর। অভাব থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৪৫ সালে সরকারি সাহায্যে ব্রিটিশ উপনিবেশ কেনিয়ায় পাড়ি দেন তিনি। সেখানে শান্তা গৌরি পণ্ডিতের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। চার পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তাঁরা।

Advertisement
০৩ ১৫

১৯৫৬-তে কেনিয়াতে শুরু হয় মাউ মাউ বিদ্রোহ। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের সময় উগান্ডা যাওয়ার জন্য কেনিয়া থেকে পরিবার নিয়ে যাত্রিবাহী জাহাজে ওঠেন লক্ষ্মীশঙ্কর। কিন্তু ঘটনাক্রমে পৌঁছে যান লন্ডনে। লন্ডনে পৌঁছনোর সময় তাঁর সঙ্গে ছিল সামান্য কিছু টাকা ও একটি জীবনবিমা।

০৪ ১৫

সেখানে গিয়ে তিনি কাজের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়ার কাজ ছাড়া কোনও কাজ জোগাড় করতে পারেননি। সেই কাজ করে যা রোজগার হত, তাতে আট জনের সংসার ঠিক মতো চলত না। তখন তিনি ভাবলেন, রাস্তায় ভারতীয় খাবার বিক্রি করলে হয়ত রোজগারের একটু সুরাহা হবে।

০৫ ১৫

সেই মতো কেনটিশ শহরে একটি বেসমেন্ট ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানকার ছোট্ট রান্নাঘরেই স্ত্রীয়ের সঙ্গে বানাতে শুরু করেন ভারতীয় মিষ্টি ও সিঙাড়া। তার পর ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি বেড়ে যায় অনেকটাই। তখন লক্ষ্মীশঙ্কর ও শান্তা দিনে প্রায় ১৮ ঘণ্টা কাজ করতেন। ছেলে মেয়েরাও স্কুল থেকে ফিরে তাঁদের কাজে সাহায্য করতে থাকে।

০৬ ১৫

বিক্রি বেড়ে যেতেই ডেলিভারি করার সমস্যা দেখা দেয়। ডেলিভারি বয় রাখার মতো সামর্থ্য তখনও তাঁদের ছিল না। তখন সেই কাজ শুরু করে তাঁদের ছ’বছরের ছেলে কিরীট।

০৭ ১৫

কিন্তু সে ইংরেজি জানত না। তাই খাবারের সঙ্গে থাকত দু’টি কাগজের টুকরো। একটিতে নিজের বাড়ির ঠিকানা। অন্যটিতে ডেলিভারি করতে যাওয়া বাড়ির ঠিকানা। বাসের চালক ও পথচারীদের সেই কাগজের টুকরো দেখিয়ে ডেলিভারির কাজ করত সে। আর ছোট হওয়ায় জুনিয়র ফ্রি বাস পাস মিলত তাঁর। যার জেরে যাতায়াতের অনেক টাকা বেঁচে যেত তাঁদের।

০৮ ১৫

এ ভাবে চলতে চলতে ভালই টাকা জমতে থাকে তাঁদের। সেই টাকা দিয়ে লন্ডনের ইউস্টন স্টেশনের কাছে একটি ছোট্ট দোকান কেনেন তাঁরা। ১৯৬১ সালে বেজওয়াটারে আরও একটি দোকান খুলে ফেলেন তাঁরা। যার জেরে বেশি পরিমাণে খাবার তৈরি শুরু করেন তাঁরা।

০৯ ১৫

কিন্তু এই সময়ই শুরু হয় অন্য সমস্যা। প্রতিবেশীরা খাবারের গন্ধ ও আওয়াজের অভিযোগ আনেন তাঁদের বিরুদ্ধে। যার জেরে সেই বেসমেন্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে তিন মাসের মধ্যে বসতি এলাকার বাইরে খাবার বানানোর ঘর খুঁজে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। বহু কষ্টে নর্দাম্পটনশায়ারে একটি ছোট্ট কারখানা খুঁজে পান তাঁরা। লন্ডন থেকে পরিবার নিয়ে সেখানেই চলে যান লক্ষ্মীশঙ্কর।

১০ ১৫

নর্দাম্পটনশায়ারের কারখানা থেকে ভালই চলছিল ব্যবসা। কিন্তু ১৯৬৫-তে নতুন সমস্যা তৈরি হয়। তাঁদের কারখানার ম্যানেজার প্রচুর সবজির অর্ডার নিয়ে বসেন। যার টাকা দিতে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এত সবজি, কী হবে? সমস্যার সমাধানে সবজির আচার তৈরির করার কথা ভাবেন লক্ষ্মীশঙ্কর।

১১ ১৫

স্ত্রী শান্তা পারিবারিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন রকম আচার ও চাটনি তৈরি শুরু হয়। নতুন এই প্রোডাক্ট লন্ডনের ভারতীয় সমাজে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেগুলির বিক্রিও বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে লন্ডনের ভারতীয়দের বাইরে সেখানকার বিভিন্ন এশিয়ান রেস্তোরাঁতেও এই আচার-চাটনি সরবরাহ শুরু হয়। এই রেডিমেড আচারই তাঁদের ব্যবসার মাস্টারস্ট্রোক হয়ে দাঁড়ায়।

১২ ১৫

লক্ষ্মীশঙ্করের ব্যবসার পরের ঝটকা আসে ১৯৭২-এ। উগান্ডায় অস্থিরতা তৈরির পর সেখানকার এশিয়ানদের জন্য রিফিউজি ক্যাম্প তৈরি করেন ব্রিটিশরা। আফ্রিকায় থাকার কারণে তাঁদের খাবারের অভ্যাস সম্পর্কে ভালই ধারণা ছিল লক্ষ্মীর। সেই মতো খাবার সরবরাহ করে তাঁর ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে। বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে খাবারের অর্ডার নেওয়া শুরু হয়। যা তাঁদের ব্যবসা বাড়াতে আরও সাহায্য করে।

১৩ ১৫

১৯৭৬ সালে নিজের ব্যবসার ভার কিরীটের হাতে তুলে দেন লক্ষ্মীশঙ্কর। খাবার তৈরির কৌশলও শিখিয়ে দেন তাঁকে। কিরীটের স্ত্রী মীনার ফুড টেকনোলজি ও হোটেল ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি ছিল। সেই পড়াশোনা ব্যবসার আধুনিকিকরণে সাহায্য করে। তন্দুর ও টিক্কা নিয়ে নতুন পরীক্ষা শুরু হয়। পাঠকের বোতলবন্দি তন্দুরি পেস্ট জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছয়।

১৪ ১৫

অবসরের পর দাতব্য সংস্থা তৈরি করেন লক্ষ্মীশঙ্কর। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে ভারতে ও ব্রিটেনে বিভিন্ন কাজ করে সেই সংস্থা।

১৫ ১৫

১৯৯৭-এ মারা যান লক্ষ্মীশঙ্কর পাঠক। শান্তা মারা যান ২০১০ সালে। বর্তমানে পাঠকের চাটনি, আচার ও বিভিন্ন রকম পেস্ট ব্রিটেনে থাকা দশ হাজার রেস্তোরাঁর ৯০ শতাংশ ব্যবহার করে। এটি এখন ব্রিটেনের সবথেকে বড় ভারতীয় খাবারের ব্র্যান্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement