Bangladesh Unrest

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলেন ক্ষমতা, পলায়নের আগের কয়েক ঘণ্টা কেমন ছিল হাসিনার?

সোমবার সকালেই বাংলাদেশ গণভবনে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। ডেকে পাঠিয়েছিলেন পুলিশের আইজিপি ও তিন বাহিনীর প্রধানকে। সেই বৈঠকের পর পরই প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১০:২৪
Share:

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তড়িঘড়ি আকাশপথে পলায়ন করেন তিনি। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রথমে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

Advertisement

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। আন্দোলন ঘিরে হিংসা ও তা দমানোর চেষ্টায় শতাধিক মৃত্যু হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-য় প্রকাশ, রবিবারই হাসিনার এক উপদেষ্টা ও দলীয় কয়েক জন নেতা হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। একাধিক সূত্রের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘প্রথম আলো’-য় উল্লেখ, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ সেনার হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না হাসিনা। বরং সোমবার থেকে কার্ফু নিয়ে আরও কড়াকড়ি করতে চেয়েছিলেন।

বাংলাদেশের একাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর পদস্থ আধিকারিক সূত্রে ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, সোমবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ পুলিশের আইজিপি ও তিন বাহিনীর প্রধানকে ডাকা হয়েছিল গণভবনে। হাসিনা একপ্রস্ত বৈঠক করেন তাঁদের সঙ্গে। সেনাবাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, তা নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে তিন বাহিনীর কর্তাদের বিশ্বাস করে শীর্ষপদে বসেছিলেন, এমন কথাও হাসিনা বৈঠকে বলেছিলেন বলে দাবি।

Advertisement

বৈঠক সূত্রে খবর, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। তবে পুলিশের আইজিপি হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, এই কঠোর পথে আর বেশি ক্ষণ আটকে রাখা সম্ভব নয়। কঠোর উপায়ে বলপ্রয়োগ করে যে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না, সে কথা বৈঠকে বার বার হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু হাসিনা তা মানতে রাজি ছিলেন না।

‘প্রথম আলো’-য় প্রকাশ, হাসিনা রাজি না থাকায় শেখ রেহানার সঙ্গেও পৃথক ভাবে আলোচনা করেন বাহিনীর কর্তারা। রেহানাও তাঁকে বোঝাতে ব্যর্থ হন। এর পর লন্ডন নিবাসী হাসিনা-পুত্র জয়ের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। শেষে জয়ের সঙ্গে কথা বলার পরই হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন বলে সূত্রের দাবি।

হাসিনা চেয়েছিলেন জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ সম্প্রচার করতে। কিন্তু তত ক্ষণে আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশ ‘গণভবন’-এর দিকে এগোতে শুরু করে দিয়েছিলেন। শাহবাগ, উত্তরা থেকে কাতারে কাতারে ছাত্র-যুব আন্দোলনকারীর ভিড় এগিয়ে আসছিল। গোয়েন্দা সূত্রে সে খবর যায় গণভবনে থাকা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের কাছে। দূরত্ব যা ছিল, তাতে আনুমানিক ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ওই ভিড় গণভবনে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই সম্প্রচার করার জন্য হাসিনার ভাষণ রেকর্ডের আর ঝুঁকি নিতে চাননি বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের সংশয় ছিল, হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ড করার সময় দেওয়া হলে, পালানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় তিনি পাবেন না। তাই ৪৫ মিনিটের মধ্যেই হাসিনাকে দেশ ছাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বলে ‘প্রথম আলো’-য় প্রকাশ। হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই তড়িঘড়ি হাসিনা ও রেহানাকে নিয়ে আসা হয় তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের একটি হেলিপ্যাডে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বায়ুসেনার একটি বিমানে সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পৌঁছন তিনি। সেখানেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, তাঁকে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। তবে সূত্র মারফত এ-ও জানা যাচ্ছে, দিল্লি থেকে লন্ডনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হাসিনার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement