একটা সময়ে কলম্বিয়ার ত্রাস ছিল পাবলো এসকোবার। খুন, অপহরণ, চোরাশিকার ছিল তার কাছে জলভাত। সেই পাবলোই নিজের অজান্তে হয়ে উঠেছিল বাস্তুতন্ত্রের টাইম বোমা!
নিজের অজান্তেই সে কলম্বিয়ায় প্রথম ‘জলহস্তি প্রাদুর্ভাব’ ঘটিয়ে ফেলে। বাস্তুতন্ত্রবিদদের মতে, এসকোবারের আগে পর্যন্ত কলম্বিয়ার জলহস্তির কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
এখন পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, জলহস্তিকে মেরে তাদের সংখ্যা কমিয়ে কলম্বিয়ার ওই অঞ্চলের পরিবেশ বাঁচানোর পরিকল্পনা করতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। কলম্বিয়ার প্রধান নদী ম্যাগডেলেনা এখন এই জলহস্তিদের ‘কবলে’।
কী ভাবে ওই অঞ্চলে জলহস্তি এল? সারা বিশ্বে যেখানে প্রাণী সংরক্ষণের জন্য সরব হন পরিবেশবিদেরা, সেই তাঁরা কেনই বা প্রাণীগুলিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছেন?
ঘটনার সূত্রপাত সাতের দশকের শেষের দিকে। খুন, চোরাপাচার, অপহরণ সবেতেই হাত পাকানো পাবলো বন্যপ্রাণী চোরাপাচারের সঙ্গেও যুক্ত ছিল।
পাবলো বাড়িতে ছোটখাটো একটি চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলেছিল। বন্যপ্রাণীদের সেই চিড়িয়াখানায় রেখে দিত সে। তার পর সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে দিত।
পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ পাবলোর হদিশ পেয়েই ১৯৯৩ সালে তাকে হত্যা করে পুলিশ। কলম্বিয়ার রাজধানী বগোটা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে তার বিলাসবহুল বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়।
সেই বাড়িতেই ওই চিড়িয়াখানা তৈরি করেছিল পাবলো। চিড়িয়াখানায় যা পশুপাখি ছিল সবই বাজেয়াপ্ত হয়। সবগুলিতেই বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওযা হয়। কিন্তু ৪টি জলহস্তিকে কোথাও পাঠানো সম্ভব হয়নি তখন।
কলম্বিয়ার জঙ্গলেই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয় জলহস্তিগুলিকে। পরিবেশবিদেরা ভেবেছিলেন, অচেনা পরিবেশে ওই ৪টি জলহস্তি মারা যাবে।
কিন্তু বাস্তবে উল্টো ঘটনাই ঘটেছে। বংশবিস্তার করে জলহস্তির সংখ্যা ক্রমে বেড়েই গিয়েছে। মাত্র ৪টি থেকে বেড়ে ১২০তে পৌঁছে গিয়েছে জলহস্তির সংখ্যা।
আফ্রিকার বাইরে এত বড় জলহস্তির দল সারা বিশ্বে আর কোথাও নেই। পরিস্থিতি এমন যে এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৩৪ সাল নাগাদ ১৪০০টি জলহস্তি হয়ে যাবে সেখানে।
জলহস্তির বাড়তে থাকা এই সংখ্যাই পরিবেশবিদদের চিন্তার কারণ। কারণ কলম্বিয়ার ওই জঙ্গলে জলহস্তির বাড়তে থাকা সংখ্যা বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র বদলেও ফেলতে পারে তারা। তাতে বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য উদ্ভিদ এবং প্রাণীর উপর প্রভাব পড়তে পারে।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে গেলে প্রতি বছর অন্তত ৩০টি করে জলহস্তি মেরে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা।