ম্যাকাও। চিনের পশ্চিমে পার্ল ডেল্টা নদীর পাশে গড়ে উঠেছে চিনের অধীনস্থ এই শহর। এই শহরকে ‘এশিয়ার পাপের শহর’ বলা হয়।
সাড়ে ছয় লক্ষ লোকের বাস এই শহরে। এখনাকার মাথাপিছু গড় আয় এক লক্ষ টাকা। বিশ্বের অন্যতম ধনী এই শহরকে কেন ‘পাপের শহর’ বলা হয়?
ম্যাকাওয়ের মূল অর্থনীতি নির্ভর করে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উপর। আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে প্রথম এই দ্বীপ শহরে বসতি স্থাপন করে মানুষ।
১৫৫৭ সালে প্রথম পর্তুগিজরা এখানে ব্যবসার উদ্দেশে বসতি স্থাপন করেছিল। ১৫৫৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজদের অধীনেই ছিল এই শহর। তার পর তা চিনকে হস্তান্তর করা হয়।
ম্যাকাও হল চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। সে কারণে তিনের অধিনে থাকলেও ম্যাকাওয়ের মুদ্রা, অর্থনীতি এবং শাসন ব্যবস্থা চিনের থেকে অনেকটাই আলাদা।
ম্যাকাওয়ের অর্থনীতি নির্ভর করে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উপর। এই পর্যটন শিল্পের মূলে আবার রয়েছে জুয়া এবং দেহব্যবসা। এ শহরে অর্থনীতির ৮০ শতাংশই জুয়া এবং দেহব্যবসা থেকে আসে।
শহরের মূল আকর্ষণ ক্যাসিনো। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে প্রচুর পর্যটক এই আকর্ষণেই ম্যাকাওয়ে ছুটে আসেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো রয়েছে এই ম্যাকাওয়েই।
১৮৫১ সালের পর থেকেই মূলত এই শহরে দেহব্যবসার চল শুরু হয়। চিন থেকে এখানকার ক্যাসিনোতে কাজ করার নাম করে মেয়েদের ম্যাকাওয়ে নিয়ে এসে দেহব্যবসায় লাগানো হয়।
মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, ফিলিপিন্স, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও মেয়েদের এখানে নিয়ে আসা হয়।
তবে দেহব্যবসা আইনসিদ্ধ হলেও নারী পাচার কিন্তু ম্যাকাওয়ে অন্য দেশের মতোই বেআইনি। ধরা পড়লে সর্বাধিক ১২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। নাবালক বা নাবালিকাকে পাচারের ঘটনায় সর্বাধিক ১৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
তেমনই আবার দেহব্যবসা আইনসিদ্ধ হলেও স্ট্রিট প্রস্টিটিউশন বেআইনি এই শহরে। দেহব্যবসার প্রসঙ্গ উঠলেই রেড লাইট অঞ্চলের কথা মাথায় আসে। তবে এই শহরে কিন্তু তেমন কোনও রেড লাইট অঞ্চল নেই।
এখানে দেহব্যবসা চলে মূলত মাসাজ পার্লার, ক্যাসিনো, নাইট ক্লাব, ছোট-বড় হোটেলে।
এখানকার রাস্তার দু’ধারে, আন্ডারপাস, টেলিফোন বুথ- প্রায় সব জায়গাতেই প্রস্টিটিউট কলিং কার্ড লাগানো থাকে। এটা এক ধরনের বিজ্ঞাপন। এই কার্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে ফোন করেই বুকিং করতে হয়।
পর্যটন শিল্পে ক্যাসিনোয় জুয়া এবং দেহব্যবসার প্রসার ঘটার জন্যই এই শহরকে এশিয়ার পাপের শহর বলা হয়।
এশিয়ার এই পাপের শহর অবশ্য এখন করোনাভাইরাসের কবলে। লকডাউনে স্তব্ধ সেখানকার পর্যটনশিল্প।
বন্ধ রয়েছে শহরের সীমান্তগুলো। বন্ধ রয়েছে ক্যাসিনো। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে কয়েক কোটি পর্যটক ভিড় করে এই শহরে। গমগম করা শহর এখন শান্ত।
চিনে যে ভাবে থাবা বসিয়েছিল করোনাভাইরাস, তার প্রভাব ম্যাকাওয়ে অবশ্য পড়েনি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১০। কারও মৃত্যু হয়নি এবং সবাই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।