খাজা আসিফ ও হাফিজ সইদ
ভিতর ভিতর আগুনটা জ্বলছিলই। তাতে ঘি ঢাললেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। গৃহবন্দি হাফিজ সইদ যে পাকিস্তানের পক্ষেও বিপজ্জনক, সে কথা আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় স্বীকার করে নিয়েছিলেন আসিফ। আর হাফিজের বিরুদ্ধে এ ভাবে ‘প্রকাশ্যে মুখ খোলায়’ দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাস্তায় নেমেছে হাফিজের সংগঠন জামাত-উদ দাওয়া-ও। আজ ইসলামাবাদ, করাচি, লাহৌর রাওয়ালপিন্ডি-সহ বিভিন্ন শহের তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পুড়েছে আসিফের কুশপুতুলও।
গত কাল মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী হাফিজের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন আসিফ। তাঁর মতো জঙ্গি যে শুধু ভারত নয়, পাকিস্তানের পক্ষেও বিপজ্জনক তা সোজা সাপ্টা ভাষায় মেনে নিয়েছিলেন তিনি। আর তার পরই তেড়েফুঁড়ে সরকারের বিরোধিতায় নেমেছে বিরোধী দলগুলি। সপ্তাহ খানেক আগে হাফিজকে গৃহবন্দি করার নির্দেশ দিয়ে এমনিতেই প্রবল চাপের মুখে ছিল নওয়াজ শরিফের সরকার। হাফিজ-সহ তাঁর সংগঠনের ৩৮ জন সদস্যের নামে রয়েছে ‘এক্সিট কন্ট্রোল’-এর (বিনা অনুমতিতে দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা) খাঁড়াও। মাত্র দু’দিন আগে হাফিজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইন প্রয়োগ নিয়েও চাপানউতোর চলছিল। সব শেষে আসিফের এই মন্তব্য পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।
আরও পড়ুন: আবার আক্রান্ত পাকিস্তান, কোর্ট চত্বরে নিহত ১০
ইমরান খানের দল তেহরিক ই ইনসাফ-এর নেতা মহমুদুর রশিদের কথায়, ‘‘খাজার কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি যেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ভারত আর আমেরিকার চাপেই যে পাকিস্তান রক্ষণাত্মক নীতি নিতে বাধ্য হয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আতিকের অভিযোগ, দিল্লিকে খুশি করতেই এই সুরে কথা বলছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি মৌলানা শমিউল হকের মতে, ‘‘কাশ্মীরে কী ভাবে ভারতীয় সেনা অত্যাচার চালাচ্ছে তা তুলে ধরা উচিত ছিল খাজার।’’
তবে দেরিতে হলেও সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি পাক সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। যদিও পরিস্থিতি বুঝে পা ফেলতে চাইছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘‘সারা বিশ্বই ওই জঙ্গি ও তাঁর সঙ্গীদের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘ দিন সরব। এই পরিস্থিতিতে হাফিজকে গৃহবন্দি করে রাখার সিদ্ধান্ত প্রথম যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ এবং এই সিদ্ধান্ত উপমহাদেশকে সন্ত্রাস ও মৌলবাদ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে।’’
তবে হাফিজ কাঁটার সঙ্গে আরও একটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। ভারত সরকার চায় আর এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজাহারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক ইসলামাবাদ। দিল্লি মনে করে, পাকিস্তানের অনুরোধেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিষয়টি ভেস্তে দিয়েছে চিন। পঠানকোট থেকে উরি— ভারতে একাধিক জঙ্গি হানায় মাসুদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে এসেছে ভারত। অথচ বেজিংয়ের দাবি, মাসুদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে না পেলে তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে আজ বেজিং পৌঁছেছেন ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। মাসুদের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলে দাবি সাউথ ব্লকের। চিনের শীর্ষস্থানীয় এক
কূটনৈতিক নেতার সঙ্গে আজ আলোচনা
হয়েছে জয়শঙ্করের। আগামী কাল বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ্গ ই-র সঙ্গে বৈঠক। মাসুদ ছাড়াও পরমাণু সরবরাহ গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চিনের যে আপত্তি রয়েছে, কালকের বৈঠকে সে প্রসঙ্গও অবশ্যই উঠবে।