ভারত যা-ই বলুক, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়া কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থ-মন্তব্যে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ‘বিস্মিত’ বলে টুইট করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকা সফররত ইমরান এ-ও জানিয়েছেন, ভারত যদি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করে, পাকিস্তানও সেই পথে হাঁটবে।
হোয়াইট হাউসে ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প গত কাল দাবি করেছিলেন, তাঁকে কাশ্মীরে মধ্যস্থ হতে বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের এক ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যমকে ইমরান বলছেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।’’ ইসলামাবাদ বরাবরই কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে দেখাতে চায়। ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই সুর প্রতিধ্বনিত্ব হওয়ায় স্বভাবতই খুশি পাকিস্তান। এ নিয়ে ইমরানের মন্তব্য, ‘‘জেনারেল মুশারফ এবং প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর আমলে আমরা এক বার কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম। কিন্তু আমরা এখন বিপরীত মেরুতে। আমি মনে করি, ভারতের আলোচনার টেবিলে আসা উচিত। এ ব্যাপারে আমেরিকা বড় ভূমিকা নিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।’’
ভারত অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্য খারিজ করে জানিয়েছি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলি দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলোচনা করেই সমাধান হবে। তৃতীয় পক্ষের কোনও জায়গা নেই। নয়াদিল্লির ওই বক্তব্যে ‘বিস্মিত’ ইমরানের টুইট, ‘‘কাশ্মীর সমস্যা উপমহাদেশের পরিস্থিতি গত ৭০ বছর ধরে জটিল করে রেখেছে। তার সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে ভারতের প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হলাম। কাশ্মীরের প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্ষতি হয়েছে, প্রতিদিন তারা কষ্ট পাচ্ছেন, এই সংঘাতের সমাধান প্রয়োজন।’’ একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের ১৩০ কোটি মানুষের কথা বলছি। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হলে তাঁরা উপকৃত হবেন।’’ পাক প্রধানমন্ত্রীর মতে, ট্রাম্প যদি মধ্যস্থতা করে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তা হলে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সামনে
• ইমরান খান: আমেরিকা বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র। উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে তারা। এখানে ১০০ কোটিরও বেশি লোক থাকেন। কাশ্মীর সমস্যার পাকে বাঁধা পড়ে আছে তাঁদের ভবিষ্যৎ। আমাদের দিক থেকে সব চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ফল হচ্ছে না।
• ডোনাল্ড ট্রাম্প: দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি বললেন, আপনি কি মধ্যস্থতা করতে চান? আমি বললাম, কোথায়? উনি বললেন, কাশ্মীরে। কারণ, বহু বহু বছর ধরে সমস্যাটা চলছে। আমি বিস্মিত যে ঠিক কত বছর ধরে সমস্যাটা চলছে।
• ইমরান: ৭০ বছর
• ট্রাম্প: ওরা সমস্যার সমাধান চায়। আপনিও তাই চান। আপনারা যদি সমস্যার সমাধান চান এবং আমি কোনওভাবে সমাধান করতে পারি, মধ্যস্থতা করব। দুটি অসাধারণ দেশ, নেতারাও খুবই স্মার্ট, তাঁরা সমাধান করতে পারবেন না, বিশ্বাস করা অসম্ভব। তবে আপনারা আমার মধ্যস্থতা বা সালিশি চাইলে করতে পারি
• ইমরান: মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনি যদি সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন, আপনার সঙ্গে ১০০ কোটি মানুষের দোয়া থাকবে।
• ট্রাম্প: সমাধান হওয়া উচিত। উনিও (মোদী) আমাকে একই কথা বলেছিলেন। তাই আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি বা আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি, দেখি কী করা যায়। কাশ্মীর সম্পর্কে এত কথা শুনেছি। কী সুন্দর নাম। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হওয়ার কথা কাশ্মীরের, কিন্তু এখন শুধু বোমা আর বোমা। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। কীভাবে সাহায্য করতে পারি, জানান।
কাশ্মীর, সন্ত্রাস ছাড়াও পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতাও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অন্যতম কাঁটা। ইমরানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারত যদি পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করে, পাকিস্তান কী করবে? পাক প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট উত্তর, ‘‘আমরাও পরিত্যাগ করব। কারণ, পরমাণু যুদ্ধ কখনও বিকল্প হতে পারে না। এটা আত্মহননের পথ।’’ গত ফেব্রুয়ারির ঘটনাগুলির (পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং বালাকোটে ভারতের অভিযান) পুনরাবৃত্তি হলে উপমহাদেশে উত্তেজনা বাড়বে। এটা সকলেই বুঝতে পারছেন। ইমরানের মতে, শুধু কাশ্মীরের জন্যই ৭০ বছর ধরে দুই দেশ সভ্য প্রতিবেশীর মতো থাকতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইমরানের প্রথম আমেরিকা সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে একটি ক্রিকেট ব্যাট উপহার দিয়েছেন। পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফরের জন্য আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প। কাশ্মীরে মধ্যস্থকারী হওয়া হোক বা পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ— ট্রাম্প সম্মতি দিলেও ইসলামাবাদের উপর থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনুদানের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তিনি নারাজ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে বহু বছর ধরে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় তারা কিছুই করেনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।