কমলা হ্যারিস
তিনি আমেরিকায় জন্মালেও তাঁর মা ছিলেন খাঁটি ভারতীয়। আর নিজের সেই শিকড় তাঁদের দুই বোনের মধ্যে গভীর ভাবে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন তাঁর মা, শ্যামলা গোপালন। ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সে
কথাই মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট সেনেটর কমলা হ্যারিস। ভারতের মানুষকে ‘আওয়ার পিপল’ বলেও সম্বোধন করতে শোনা গেল তাঁকে।
মাত্র কয়েক দিন আগেই কমলার নাম ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন এ বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। কমলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। তাঁকে নিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের একটা বড় অংশ উচ্ছ্বসিত। গত কাল একটি অনুষ্ঠানে তাই ‘ভারতীয়ত্বের তাস’ খেলতেই দেখা গিয়েছে কমলাকে। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ভারতের স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা। এই ৭৪ বছরের ইতিহাস দেখিয়ে দেয় সুবিচারের জন্য কী ভাবে আমাদের দেশের মানুষ লড়াই করেছেন।’’
‘সাউথ এশিয়ানস ফর বাইডেন’ নামের সেই অনুষ্ঠানে নিজের মা, ভারত সফর স্মৃতি নিয়েও অনেক কথা বলতে শোনা গিয়েছে কমলাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিজের শিকড় চেনাতে তাঁর মা তাঁদের দুই বোনকে নিয়ে চেন্নাই (তৎকালীন মাদ্রাজ) যেতেন। চাইতেন তাঁর মতো কমলা ও তাঁর বোনও যেন ইডলি খেতে ভালবাসেন। কমলার দাদু অর্থাৎ শ্যামলার বাবা পি ভি গোপালন ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। চেন্নাই গিয়ে দাদুর সঙ্গে হাঁটতে বেরোতেন বলেও জানিয়েছেন কমলা। বলেছেন, ‘‘যে নায়কদের হাত ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের জন্ম হয়েছিল, দাদু তাঁদের গল্প বলতেন আমাদের। বলতেন ওই সব দেশপ্রেমীর ফেলে রাখা কাজই আমাদের শেষ করতে হবে। ওই সব শিক্ষাই আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আমি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, তার পিছনে রয়েছে আমার দাদু আর মায়ের সেই শিক্ষা।’’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জো বাইডেনও। আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত-সহ গোটা বিশ্বের ভারতীয়দের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাইডেন। বলেছেন, ‘‘আমেরিকা আর ভারতের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে যা সময়ের সঙ্গে আরও মজবুত হয়েছে।’’ তাঁর প্রচার দলের তরফে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় ফিরলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করার দিকে নজর দেওয়া হবে।
ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও এক হাত নিয়েছেন বাইডেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ট্রাম্পের জন্য এইচ-১ বি ভিসা নীতিতে যে কোপ পড়েছে, তাতে তিনি বদল আনবেনই। বাইডেনের কথায়, ‘‘ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উপরে আমার সরকার ভরসা রাখতে চায়। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই সরকার চালাব, কথা দিচ্ছি।’’ কালকের বক্তৃতায় ভারতের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তিতে নিজের ভূমিকার প্রসঙ্গও টেনেছেন বাইডেন। জানিয়েছেন, তিনি তখনই জানতেন ভারতের সঙ্গে আমেরিকা সুসম্পর্ক বজায় রাখলে বিশ্ব রাজনীতির ছবিটাই অন্য রকম হবে।
একই সঙ্গে কাল নাম না করে পাকিস্তান আর চিনের প্রসঙ্গও টেনেছেন বাইডেন। বলেছেন, ‘‘নয়াদিল্লিকে তাদেরই সীমান্ত এলাকায় যে সব বিরুদ্ধ শক্তি ভয় দেখায়, আমরা ক্ষমতায় ফিরলে তার বিরুদ্ধেও লড়ব। সব সময় সব ক্ষেত্রে ভারতের পাশে দাঁড়াব।’’